বাসস: সাম্প্রতিক সময়ের ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে কঠিন লড়াইয়ে শামিল হতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এমন লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজ শুরু করছে টাইগাররা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সকাল ১০ টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম টেস্ট ম্যাচটি । টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের রেকর্ড সমৃদ্ধ না হলেও মাঠের লড়াইয়ে কোন ছাড় না দিতে অঙ্গীকাাবদ্ধ বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক বলেন, ‘কোন সন্দেহ নেই যে সিরিজটি চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে আমাদের দক্ষতায় আমরা ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’
দলের সেরা তিন খেলোয়াড় না থাকায় নতুন রুপে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাওয়া হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি থেকে সুস্থ হতে না প্রথম টেস্টের দলে নেই সাকিব আল হাসান। ইনজুরির কারনে দলের বাইরে তামিম ইকবালও। আর আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টের দলে ছিলেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। হারারের ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর অপরাজিত ১৫০ রানের সুবাদে বাংলাদেশ জয় পায় ২২০ রানের ব্যবধানে।
দলের সাকিবকে দুই জন খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই প্রথম টেস্টে দল সাজাতে ঘাম ঝড়াতে হবে বাংলাদেশকে। মাথা ব্যাথার কারণ হবে মাহমুদুল্লাহর না থাকাটাও।
ইয়াসির আলিকে অভিষেক ঘটিয়ে বাংলাদেশ হয়তো সেই শুন্যস্থানগুলোর বিছুটা পূরণ করতে পারে। দলে দুই নতুন মুখ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও পেসার রেজাউর রহমানকে নিয়ে কোন ইঙ্গিত দেননি মোমিনুল।
তিনি বলেন, ‘সিনিয়র খেলোয়াড়দের ছাড়া খেলা সহজ হবে না। তবে আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়। আমাদের যা আছে তাই নিয়ে খেলতে হবে। আমি মনে করি অন্যান্য খেলোয়াড়রা তাদের দক্ষতা দেখানোর জন্য যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে না খেললেও, আবারো দলে ফিরেছেন পেসার আবু জায়েদ রাহি। নিয়মিত টেস্ট বোলার ছিলেন রাহি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে টেস্টে সুযোগ পাননি তিনি। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পান তাসকিন আহমেদ। যে কি-না, সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হাতের ইনজুরিতে পড়েন। এতে প্রথম টেস্টের দলে সুযোগ পাননি তাসকিন।
এই বছরে পাঁচটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাত্র একটিতে জিতেছে এবং তিনটি হেরেছে তারা। দু’টি হার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এবং একটি শ্রীলংকার বিপক্ষে। তবে শ্রীলংকার সাথে একটি টেস্ট ড্রও করেছে টাইগাররা।
ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই টেস্টেই হারাতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু বাজে বোলিংয়ের কারনে তার আর সম্ভব হয়নি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বাদে, পাঁচ টেস্টে বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিং ভালোই ছিল। কিন্তু জয়-হারের অনুপাত কমিয়ে দেয়।
পাকিস্তানের কাছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর এবং তার আগে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে বাজে পারফরমেন্সের পর টেস্ট লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। উভয় লড়াইয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং পারফরমেন্স ছিলো অত্যন্ত হতাশার। কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ফরম্যাট হওয়ায় টেস্টে ভাগ্য ফেরানোর আশা করতে পারে টাইগাররা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১০টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে একটি ড্র বাদে সবগুলোই জিতেছে পাকিস্তান। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে দ্বিপাক্ষীক সিরিজ খেলতে আসা সিরিজে টেস্টটি ড্র হয়েছিলো। ড্র হওয়া টেস্টে ২০৬ রান করেছিলেন তামিম। যা টেস্টে বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এছাড়া ঐ ম্যাচে ১৫০ রান করেছিলেন ইমরুল কায়েস। উদ্বোধনী জুটিতে ৩১২ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন তামিম ও ইমরুল।
অন্য দিকে টেস্ট ক্রিকেটে দারুন ছন্দে রয়েছে পাকিস্তান। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ ড্র করেছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজেও দুর্দান্ত লড়াই করে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে পাকিস্তান।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১২১টি টেস্ট খেলেছে, জিতেছে ১৪টিতে হেরেছে ৯১টিতে। এরমধ্যে ৪৩টি ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে। বাকী ১৬ টেস্ট ড্র করেছে।
পরিসংখ্যানই বলছে এই ফরম্যাটে টাইগাররা কতটা দুর্বল। কিন্তু ঘরের মাঠে খেলা হবার কারনে, বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল: মোমিনুল হক (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাইম হাসান, তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন চৌধুরী, আবু জায়েদ রাহি, ইয়াসির আলি রাব্বি, মাহমুদুল হাসান জয় ও রেজাউর রহমান রাজা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: