-2021-08-15-15-02-23.jpg)
শোকের মাস আগস্ট। আগস্ট মাস এলেই আকাশ আঁধারে ডেকে যায়। কালো মেঘে ছেয়ে যায় পুরো আকাশ। জাতীয় শোক দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। প্রতিবছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবসটি শোকের সাথে পালন করা হয়।
১৫ ই আগস্ট, ১৯৭৫ বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় একটি দিন। ঘাতকরা এই দিন সুবহে সাদিকের সময় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাসায় স্ত্রী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ ও এক সহোদর আত্মীয়-পরিজনসহ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম ও নৃশংসভাবেল হত্যা করে ঘাতকের দল। এমনকি শিশু রাসেলকেও ছাড় দেয়নি। শিশু রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তরের এই দিনে শ্রাবনের বর্ষার ধারা আর আগস্টের শোকে নির্বিবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিলো বাংলাদেশ! বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর বাঙ্গালির অশ্রুতে সেদিন ও প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিলো সেই বৃষ্টি যেনো বাংলার মানুষের এক আর্তনাদ। পর্দার আড়ালে ছিলো সামরিক এবং বেসামরিক ষড়যন্ত্রকারীরা।
মূলত এই হত্যালীলায় তারাই ছিলো সুবিধাভোগী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিভিন্ন ভাবে তাকে সাবধান করত, এইভাবে অরক্ষিত ভাবে না থাকতে। নিজের ব্যাপারে সাবধান হওয়ার কথা বলতো কিন্তু বঙ্গবন্ধু বরাবরই তার নিজ নিরাপত্তায় নারাজ ছিলো বরং তিনি অবিচল আস্থায় বলতেন, "আমায় কোনো বাঙালি মারবে না"।
অথচ বিশ্বাসঘাতকের দল বঙ্গবন্ধুর কথা, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস পুরোপুরি ভূল প্রমান করে সেই ১৫ই আগস্ট ভোরের আলো ফুটার আগেই তাকে খুব নির্মম ভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শুধু নেতা ছিলো না সে ছিলো বাঙালির আত্নবিশ্বাস, বাঙালির মনের জোর, বাঙালির অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস।
তিনিই শিখিয়ে গিয়েছে কিভাবে নিজের মুক্তি ছিনিয়ে আনতে হয় কিভাবে দেশকে ভালোবাসতে হয় কিভাবে একজন দেশের প্রকৃত নাগরিক হতে হয়।
তিনি শুধু একজন নেতা ছিলেন না তিনি ছিলেন অন্তত বিনয়ী, নরম এবং নিরহংকারী একজন মানুষ। তিনি মানুষ কে সাহায্য করতে কখনো পিছপা হয়নি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন তা অবিস্মরণীয়।৭ মার্চের ভাষণ কে সারা বিশ্বে স্বাধীনতার প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বলা হয়।
সেদিন তাঁর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই অমর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিপীড়িত কোটি বাঙালি। সেই ভাষণে কি এক অলৌকিক জাদু ছিলো যার প্রভাব পড়েছিলো কৃষক, কামার, জেলে, ছাত্র সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ।
যার ফলশ্রুতিতে ৩০ লক্ষ শহিদের বিনিময়ে আমরা আমাদের দেশ ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। পেরেছি বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশের খেতাব। এই এক অমূল্য অর্জন যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের উজ্জীবিত মন্ত্রে সম্ভব হয়েছে কেননা তার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছে বাংলার মানুষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাতকরে দলরা পচাত্তরে ঠিকি নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে কিন্তু তার কীর্তি আজ ও আমাদের মনে করিয়ে দেয় "যতকাল রবে পদ্মা-মেঘনা-গৌরী যমুনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান"
এ দিবসে কালো পতাকা উত্তোলন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখা হয় দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিবসের উৎপত্তি।
লেখকঃ
সাদিয়া আফরিন মৌরী
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: