পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের সকলকে

ইমরুল কবির | ১ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৪১

ইমরুল কবির | লেখক

মানুষের বিকাশ উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিবেশের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।পরিবেশ যেমন মানসিক বিকাশ ও সামাজিকীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, ঠিক তেমনি এর দূষণ মানবসভ্যতার বিকাশকেও বাধাগ্রস্থ করে।

শিল্পায়নের যুগে নিত্যনতুন আবিষ্কারের ফলে যেমন দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে প্রতিনিয়ত তা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।

পরিবেশের একটি অন্যতম উপাদান হলো বায়ু যা প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। পূর্বে আমরা জানতাম নির্মল বায়ু, বিশুদ্ধ বাতাস স্বাস্থ্যের মূল উপাদান। কিন্তু প্রতিনিয়ত বায়ু দূষণ যেভাবে বাড়ছে তাতে কি আমরা বলতে পারি নির্মল বায়ু, বিশুদ্ধ বাতাস স্বাস্থ্যের মূল উপাদান ? বিভিন্ন গবেষণায় বায়ু দূষণের জন্য তিনটি প্রধান কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যথা ইটভাটার ধোঁয়া, নির্মাণ সামগ্রী ও ট্রাফিক । ’ব্রিদিং হেভি: নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন এন্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এই গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিবছর বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ এবং ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসাবে স্থান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এবং বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বায়ু দূষণের কারণে মারা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আরো অভিমত প্রদান করেছেন যে, নগরায়ণের ফলে বিভিন্ন ভবন ও নির্মাণশৈলির কারণে খোঁড়াখুড়ির প্রয়োজন হয়। তার কারণে প্রতিনিয়ত ধূলাবালির সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা বায়ু দূষণের অন্যতম প্রভাবক হিসাবে কাজ করছে।বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে আমাদের দেশের বায়ুতে ক্ষতিকর উপাদান পিএম ২.৫ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দেশে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, ৩০ বছরে দেশে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনজনিত মৃত্যু কমলেও বায়ু দূষণ জনিত মৃত্যু বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বায়ু দূষণের কারণে দেশের ভিতর শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া দেশের মোট শিশুদের, ২৬ শতাংশ শিশুর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ শিশু তাদের ফুসফুসের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। দেশের মোট জনসংখ্যার যেখানে ৮% শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যায় আক্রান্ত ছিল তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ % হয়েছে।

তাছাড়া পানি দূষণ পরিবেশ দূষণের আরেকটি অন্যতম প্রধান নিয়ামক। আমরা জানি, গৃহস্থালীর আবর্জনা, শিল্প ও কৃষি খামারের বর্জ্য এবং মানুষ ও পশুর মলমূত্র থেকে পানিদূষণ ঘটে। শিল্পে ব্যবহৃত এসিড, বালাইনাশক, তেল ও বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ প্রতিনিয়ত পানির সাথে মিশে আমাদের পানিকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে।পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য পানি, মাটি, বায়ু সকল কিছুর ভারসাম্যের প্রয়োজন কিন্তু প্রতিনিয়ত এ ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।

প্রতিনিয়ত আমরা নগরায়ণকে ত্বারান্বিত করার জন্য নদীতে বাঁধ দিয়ে,নদী ভরাট করে, ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করছি তাছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বর্জ্যদূষণ, মাটিতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগের কারণে মাটি দূষণ হচ্ছে। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য দিনের পর দিন নষ্ট হয়ে যাবে যার প্রভাব শুধু পরিবেশের উপর পড়বে তা নয় তার প্রত্যক্ষ প্রভাব আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করছি যথা: জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, বায়ুদূষণ, পানি দূষণ,নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি ইত্যাদি। মানব সভ্যতার বিকাশকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করতে পরিবেশের প্রত্যক্ষ প্রভাব জরুরি।

আমাদের বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ’’স্মার্ট’’ বাংলাদেশে রূপান্তর করা। এই রূপান্তরের জন্য যে চারটি বিষয়কে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরা হয়েছে তা হলো স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট নাগরিক। এই লক্ষ্যগুলোকে যদি আমরা কি কখনো টেকসই উন্নয়নের আলোকে বিশ্লেষণ করতে চাই তাহলে এখন থেকেই আমাদের পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে।

পরিবেশকে অরক্ষিত রেখে আমরা কি কখনো এই উদ্দেশ্যগুলোকে বাস্তবায়ন করতে পারবো? একটি দেশের জনগণকে যদি দেশের কাঙ্ক্ষিত জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হয় এক্ষেত্রে জনগণের জন্য সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের একান্ত লক্ষ্য। স্বাস্থ্য,মননশীলতা, মেধা ও প্রজ্ঞার উন্নয়নের জন্য সরকারের উচিৎ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অরক্ষিত পরিবেশকে রক্ষা করা যাতে দেশের প্রতিটি শিশু বড় হয় নির্মল বাতাস, মাটি,পানিকে গ্রহণ করে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের মত বলতে হয়, ‘‘এটা আমাদের কর্তব্য প্রতিটি নবীনের জন্য একটি সুন্দর বাসগৃহ তৈরি করা।’’

লেখক ও উন্নয়ন গবেষক,
প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: