ব্যক্তিগতভাবে ভালো হয়ে থাকাই যথেষ্ট নয়, সমাজকেও ভালো করার প্রচেষ্টা দরকার

ইমন মিয়া | ১১ নভেম্বর ২০২৩, ২০:৫৮

সংগৃহীত ছবি
কালের প্রবাহে আজ আমরা এমন একটি শোচনীয় পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছি যেখানে ব্যক্তি নয়, ধ্বংসের মুখোমুখী দাঁড়িয়েছে আমাদের সমাজ। মনুষ্যত্ব হারিয়ে সামাজিক জীব মানুষ রূপ নিয়েছে অমানবিক প্রাণিবিশেষে।
 
এমন কোনো অন্যায়, অপরাধ নেই যা আমাদের সমাজে হচ্ছে না। নিজের পিতা-মাতাকে জবাই দিতেও মানুষের আত্মা কাঁপছে না, কোলের শিশুর জীবন নিতে দ্বিধা আসছে না, কয়েকশ টাকার লোভে নৃশংসভাবে একজন আরেকজনকে হত্যা করছে। স্বার্থের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে সমস্ত ন্যায়, সত্য, সুবিচার। এই ব্যক্তিগত স্বার্থান্ধতা হুমকির মুখে ফেলেছে সমাজকে। কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে সমাজের ঐক্য, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য। সমাজ হয়ে পড়ছে ভঙ্গুর, মেরুদণ্ডহীন প্রথাবিশেষে।
মানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক জীব।
 
বেঁচে থাকার তাগিদে তাকে প্রতিক্ষণে সমাজের সহায়তা গ্রহণ করতে হয়। সমাজকে দিয়ে এবং সমাজ থেকে নিয়ে মানুষের পথচলা। চিরকালই মানুষের পরম বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে তার সমাজ,তার আশেপাশের পরিচিত অপরচিত মানুষগুলো। সমাজে মানুষে মানুষে সহযোগিতা-সহমর্মিতার মাত্রা যত বেশি থাকে সমাজ তত বেশি শক্তিশালী ও দৃঢ় হয়। আর সহযোগিতার পরিধি ক্ষুদ্র হলে সে সমাজ স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুদ্রতায় ডুবে থেকে ধ্বংসের প্রহর গুণে।
 
বর্তমানে আমাদের সমাজের হাল-হকিকত সকলেরই জানা। যাদের দৃষ্টি আছে, অন্ধকার নামলে তাদেরকে বলে দেওয়ার দরকার পড়ে না যে অন্ধকার নেমেছে, তা রাতের অন্ধকারই হোক আর মিথ্যার অন্ধকারই হোক, আর যাদের দৃষ্টি নেই, অন্ধকার কেন, মৃত্যুখাদের কিনারে দাঁড়িয়েও তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করে।
 
আফসোস এই জাতির জন্য, এই কোটি কোটি মানুষের জন্য, যারা ইতোমধ্যেই বোধ-বুদ্ধি খুইয়ে নিজেদের ও অনাগত বংশধরের জন্য মৃত্যুউপত্যকা রচনা করেছে নিশ্চিন্তমনে, কোনো প্রকার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ব্যতিরেখে। পতনোন্মুখ এই সমাজের অবর্ণনীয় দুর্দশা দেখে, নির্যাতিত, নিপীড়িত, দুঃখ-কষ্টে কাতর মানুষের আর্তনাদ দেখেও যাদের কপালে ভাঁজ পড়ে না। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় স্বচক্ষে দেখার পরও যারা খাচ্ছে-দাচ্ছে, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে কোনো প্রকার উদ্বেগ ছাড়াই, নির্বিকার চিত্তে। সমাজের এই অধঃপতন কি মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে না। আসলে সমস্যাটা ওখানে নয়, সমস্যা হচ্ছে মানুষের স্বার্থবাদিতা তাকে সমাজের এই অধঃপতন রোধে করণীয় থেকে বিরত রেখেছে।
 
স্বার্থ নামক সামাজিক মহামারিটি সমাজকে এতটাই গ্রাস করে ফেলেছে যে, দয়া, মায়া, মমতা তার কাছে গৌণ। অপরের কী হচ্ছে না হচ্ছে, সুখে-আছে নাকি দুঃখে আছে, খেতে পেল কি পেল না তা দেখার বিষয় নয়। নিজ দেশকে ভুলে, নিজ সমাজকে ভুলে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে নিজ পরিবার পরিজনকে ভুলে মানুষ ব্যস্ত থাকছে নিজেকে নিয়ে। সমাজের প্রতিটি মানুষ আজ মোহাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অর্থের মোহ, ক্ষমতার মোহ, মান-সম্মানের মোহ বিবেক বুদ্ধি, জ্ঞান-গরীমাকে করেছে অচল অসার নির্জীব।
 
এখন বলুন এভাবে সমাজ চলতে পারে সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো সহযোগিতা, কেননা সমাজের প্রতিটি মানুষ সর্বদা একে অপরের উপর নির্ভরশীল থাকে। এই সহযোগিতার শর্ত ভঙ্গ করে যদি স্বার্থবাদিতার ভিত্তিতে কোনো সমাজ দাঁড়াতে চায় সেটাকে আর যাই হোক মানুষের সমাজ বলা যায় না। তাই অতি জরুরি ভিত্তিতে এখনই সমাজকে ঢেলে সাজাতে হবে।
 
সমাজ নিয়ে ভাবতে এই যখন অবস্থা, তখন একটি বারও ভেবেছেন কি, আপনার অনাগত সন্তানের জন্য কেমন সমাজ রেখে যাচ্ছেন মনে রাখবেন, এই সমাজের অনুকূলেই কিন্তু আপনার ভবিষ্যৎ বংশধরের চরিত্র নির্মিত হবে।
 
তাই ব্যক্তিগতভাবে ভালো হয়ে থাকাই যথেষ্ট নয়, সমাজকেও ভালো করার প্রচেষ্টা দরকার।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: