চাইলেও ঈদে নীড়ে ফিরতে পারেনা তারা!

নূর ই আলম | ৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:১৩

ছবিঃ সংগৃহীত
ক্যাম্পাস ছুটি হয়েছে সেই প্রথম রোজা থেকেই। অফিস কার্যক্রমও বন্ধ করে কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখন যার যার নিজস্ব গন্তব্যে পৌঁছে পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত। তবে পেশাগত দায়িত্বের কারণে কেও কেও এখনো ঈদের উৎসব আনন্দের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজের কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নেই এই মুসলমানদের সবথেকে বড় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আনসার সদস্যরা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে এভাবেই ত্যাগ স্বীকার করে নিচ্ছেন এই ঈদের ছুটিতে।
 
কারো কাছে মামা, কারো কাছে ভাই আবার কারো কাছে আঙ্কেল। সর্বক্ষণ দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ক্যাম্পাসকে আগলে রাখছেন তারা। দায়িত্ব পালনে নেই বিন্দুমাত্র অবহেলা। ঈদে ক্যাম্পাস শূন্য হয়ে যেনো তাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়ে যায়। নিরবে-নিভৃতে, হাসিমুখে কাজ করে যাচ্ছেন তারা । চেয়ে চেয়ে দেখছেন আর পরিচিতদের হাসিমুখে বিদায় দিচ্ছেন। এ যেন একা রেখে চলে যাওয়া বিচ্ছেদ।
 
ক্যাম্পাসের প্রতিটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যখন তাদের পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে যখন সবাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে ব্যস্ত তখনই স্বপ্নের ক্যাম্পাসটাকে আগলে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে আঠারো হাজার মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন আনসার সদস্যরা।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি কালীন সময়ে মোট ৮৮ জন আনসার সদস্য তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এরমধ্যে ইদের ছুটি পায়নি কেউ-ই। যারা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন তারা হয়তো পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে না ফলে সহকর্মীদের সাথেই কাটবে তাদের ঈদ। এ এক অন্যরকম ঈদ। ঈদ ব্যাতিত অন্যান্য সময়ে তাদের ছুটি বের করে নিতে হয় পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য।
 
এই ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। সেই ফরিদপুর থেকে আসা এক আনসার সদস্য বলেন, সবারই মন চায় পরিবারের সাথে এই ঈদের সময়টুকু কাটাইতে। কিন্তু আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে সেটা হয়ে উঠে না। আমাদের দায়িত্ব তো পালন করতে হবে। আমার পরিবারে আপনার মামী সহ ছেলেমেয়ে রয়েছে তাদের কথা চিন্তা করেও খারাপ লাগে। কিন্তু কিছুই করার নেই আসলে সব মিলিয়ে আমাদের কাজের মধ্যই আনন্দ খুঁজে নিয়েছি। এখন আপনাদের ভার্সিটি ই আমার দ্বিতীয় পরিবার।
 
আনসার সদস্য ইব্রাহিম বলেন , ‘সব দুঃখ-কষ্ট মাটি চাপা দিয়ে পরিবারের জন্য টাকা ইনকাম করতে আর শত কিলোমিটার দূরে। কিন্তু দেখেন? এই পরিবার ছেড়েই ঈদ করতে হচ্ছে আমাদের। আমি গত কয়েক বছর যাবত পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারি না। কারণ ঈদে বাড়ি যাওয়া হয় না। এমনিতে ঈদের পর গিয়ে দেখা করবো সবার সাথে। তাতে কি আর ঈদের আনন্দ পাওন যায় মামা? আপনি ই কন? আমাগো কি পরিবারের সাথে ঈদ করতে ইচ্ছা করে না? কিন্তু ডিউটি দিবে কে তখন।’
 
নিরাপত্তার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিকিউরিটি ইনচার্জ মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের এখন এই ছুটিতে ৮৮ জন আনসার সদস্য কর্মরত আছেন। ক্যাম্পাস যতদিন ছুটিতে থাকবে আমাদের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি রাখবো না ইনশাআল্লাহ। 
 
এবার কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পরিবার ছাড়া ঈদ পালন করবে ৮৮ জন আনসার সদস্য। ঈদে সবাই চায় তার পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে। সেজন্যই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা হয় সবার। কিন্তু ফেরা হচ্ছে না তাদেরই শুধু। কাঁধে তাদের রয়েছে দায়িত্ব। এই দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকেই ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাখছে নিরাপদ। তাদের এই স্যাক্রিফাইস মনে করিয়ে দেয় মানুষ মানুষের জন্য। কেও অন্য একজনের আনন্দের জন্য নিজের সুখটাও বিসর্জন দেয় কখনো কখনো। হয়তো এটাই পৃথিবীর নিয়ম!
 
লেখক,
কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগ, 
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: