দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঢোলকলমি

সময় ট্রিবিউন | ২৩ মে ২০২৩, ২১:৪৯

ছবিঃ সংগৃহীত

দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঢোলকলমি গাছ। ঢোল কলমি বেড়াগাছ ও বেড়ালতা নামেও বেশ পরিচিত। দেশের প্রায় সকল এলাকার রাস্তার ধারে, বাড়ির পাশে, জলাশয়ের ধারে, মাঠে-ঘাটে, খাল-বিলের ধারে সর্বত্রই চোখে পড়ে। গ্রামে অবহেলায় বেড়ে ওঠা আগাছা হিসেবে পরিচিত বেড়ালতা বা ঢোল কলমি।

ঢোল কলমি গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদ। এর কান্ড দিয়ে কাগজ তৈরি করা যায়। সবুজ পাতার গাছটি ছয় থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

অযত্ন আর অবহেলায় জন্ম নেয়া ঢোলকলমি গাছের ফুল যেকোন বয়সি মানুষের নজর কাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। পাঁচটি হালকা বেগুনি পাপড়ির ফুল দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। সারা বছরই ঢোল কলমির ফুল ফুঁটে থাকে। তবে বর্ষার শেষে শরৎ থেকে শীতে ঢোলকলমি ফুল বেশি দেখা যায়। একটি মঞ্জরিতে চার থেকে আটটি ফুল থাকে। ফুলে মধুর জন্য কালো ভ্রমরও আসে।

এ গাছ অল্পদিনের মধ্যেই ঘন ঝাড়ে পরিণত হতে সক্ষম। কলমি গাছ জমির ক্ষয় রোধ করে থাকে। দেশের গ্রামাঞ্চলে এই গাছ জমির বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহার করা যায় ঢোল কলমির ডাটা। নদীর তীরে কিংবা বিশাল ফসলের মাঠে ঢোল কলমি জন্মে পাখির বসার জায়গা করে দেয়। এ গাছে বসে বিভিন্ন প্রকারের পাখি পোকামাকড় খায়। ফুলের মধু সংগ্রহ করতে কালো ভোমরার আনাগোনাও লক্ষ করা যায়। গ্রামের শিশুরা ঢোলকলমির ফুল দিয়ে খেলাও করে থাকে।

এক সময় কুড়িগ্রামে বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম অঞ্চলগুলোতে অধিকাংশ পরিবার ফসলের ক্ষেত, পুকুর ও বসতবাড়ীর চারপাশে বেড়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে এই ঢোল কলমি ব্যবহার করতেন। কেউ কেউ আবার কলমি গাছের সাথে নেট ও বাঁশের চটা ব্যবহার করে বেড়াকে শক্তিশালী করতেন।

অনেকেই অতিরিক্ত অংশ রান্নার কাজে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করেছে। ঢোল কলমির বীজ ও পাতায় বিষাক্ত উপাদান থাকে এবং তেতো স্বাদের সাদা কষ থাকায় এর পাতা গরু, ছাগল ও মহিষ খায় না। তাই বেড়া হিসেবে এটা ব্যবহারের চাহিদা অনেক বেশি। ঢোল কলমি খরা ও বন্যায় সহনীয় বলে প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে সক্ষম।

গত ৯০ দশকে পোকার ভয়ে এ গাছ ধ্বংস করার একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। দেশ জুড়ে ভয়ংকর আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ঢোল কলমি গাছে থাকা এক ধরনের পোকা। গুজব রটে যায়, এই পোকা এতটাই ভয়ংকর যে, কামড় দিলে মৃত্যু অবধারিত, এমন কি স্পর্শ লাগলেও জীবন বিপন্ন হতে পারে। এইসব খবর রেডিও, টিভি, পত্রিকায় মহামারীর মৃত্যুর খবরের মত কবে ক’জন মরলো ক’জন হাসপাতালে গেল সে রকম ভাবে প্রচারিত হয়েছিল মাসজুড়ে।

সারাদেশে সাধারণ মানুষ গণহারে, এমনকি স্থানীয় অনেক সংগঠন ঢোল কলমি গাছ কেটে সাবার করেছিলো। এই বিদঘুটে নামের পোকাটি যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো আমাদের এই দেশে, তার জুড়ি মেলা ভার! শুধু গ্রামে না, ঢোল কলমি পোকার আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছিলো খোদ রাজধানী ঢাকা শহরেও।

আতংক যখন চরম পর্যায়ে তখন টিভিতে একজন বিশেষজ্ঞ পোকাটি ধরে এনে নিজের হাতের ওপর ছেড়ে দিয়ে হাটিয়ে, তারপর হাত দিয়ে পিষে মেরে দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে এটি আসলে খুবই নিরীহ একটি কীট, মোটেও প্রাণ সংহারি নয়। এরপর থেকেই আতঙ্ক কেটে যায়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: