ম্রো সমাজ জ্ঞান বিজ্ঞানে সব দিক দিয়ে সমৃদ্ধ জাতি গড়ে উঠবে বলে আশা করেন ম্রো ভাষায় লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো। এই যুবক ম্রো সম্প্রদায়ের লেখক ও গবেষক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচ্য ভাষা ও পালি বিভাগ থেকে ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেছিলেন। তার উদ্যেগে নিজের লেখার ম্রো ভাষার ব্যাকরণসহ ১৯টি ও বাংলায় ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি ম্রো ভাষা এবং নিজেদের জাতিগোষ্ঠির সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি এর বাইরে কাজ করে চলেছেন নিজ সম্প্রদায়ের মানুষকে এগিয়ে নিতে।
পাহাড়ের পাদদেশে রামরি পাড়ায় ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াঙ ঙান ম্রো"র উদ্যােগে ম্রো ভাষায় সাংচিয়া তেকরা-সাংচিয়া শুনতারা কিম" অর্থাৎ গল্প বলা-গল্প শোনার ঘর বা পাঠাগার গড়ে তুলেছেন চিম্বুকের সড়কের ধারে রামরি পাড়ার এলাকায়।
বান্দরবান শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এই রামরি পাড়া। ওই এলাকায় নিজেরদের ভাষা সংস্কৃতির ও ঐতিহ্যকে তুলে আনতে প্রার্থণার মাধ্যমে গল্প বলা ও গল্প শোনার পাঠাগার তৈরী করেন ক্রামা ধর্মের ধর্মীয় গুরু লংঙি ম্রো।
জানা গেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ম্রো ভাষা ও ঐতিহ্য সংস্কৃতির গুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। সেসব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গুলো তুলে আনতে এই উদ্যেগটি নেওয়া। এছাড়াও ম্রো জনগোষ্ঠীর যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত রয়েছে তাদের উদ্দ্যেশ্যে এই পাঠাগারটি বানানো উদ্যেগ নেন ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো।
সেসব শিক্ষার্থীরা ছুটি পেলে এই পাঠাগারে এসে নিজেদের সুখ দুঃখের আলাপরচয়িতা হবে। নিজেদের সংস্কৃতি, ইতিহাস,এতিহ্য নিয়ে নিজেদের জীবনের গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান বিনিময়ের প্রসারিত ঘটবে। ধীরে ধীরে ম্রো সমাজ জ্ঞান বিজ্ঞানে সব দিক দিয়ে সমৃদ্ধ জাতি গড়ে উঠবে বলে আশা করেন এই লেখক।
ম্রো ভাষা লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো জানান, যখন তিনি খুব ছোট ছিলেন তখন মা-বাবা অবসর সময়ে বিভিন্ন গল্পগুলো শোনাতেন। ঐসময় মা-বাবার মুখে যেসব গল্প শুনতেন সেই সমস্ত গল্পগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষন করার চেষ্টা করেন। তারপর থেকে দীর্ঘদিনের একটি পরিকল্পনা করেছিলেন পাহাড়ের পাদদেশে ম্রো ভাষায় পাঠাগার বানাবেন।
পরবর্তীতে তার এই উদ্যেগের পাহাড়ের পাদদেশে তৈরী হয় গল্প বলা ও গল্প শোনার পাঠাগার। এই পাঠাগার তৈরী করার ফলে প্রয়াত তার মা-বাবা"র আত্মাও শান্তি পাবে। এমনকি এলাকার মানুষেরও মঙ্গল হবে। তবে বর্তমানে ছোট পরিসরে পাঠাগারটি তৈরী করলেও আগামীতে ঘরটি বড় করার ইচ্ছে আছে বলে জানান লেখক ও গবেষক ইয়াঙ ঙান ম্রো।
তিনি বলেন, রামরি পাড়ার আশে পাশে প্রাইমারী স্কুল ও ছাত্রাবাস আছে সেখান থেকে ম্রো ছাত্র-ছাত্রীরা বন্ধের সময় এখানে এসে বই পড়বে। শিক্ষার্থীর ও যুব সমাজরা সেখানে নিয়ে নিজেদের গল্প, সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা হবে। সমাজকে সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হবে। তাদের গল্পের মাধ্যমে একে-অপরের জ্ঞান বিনিময় হবে দেশ ও সমাজের ভাল কাজে উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
রোয়াংছড়ি কলেজের প্রভাষক অমর বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে জুমবাগানে গল্প বলা ও গল্প শোনার ঘরটি খুবই ভালো উদ্যোগ। ম্রো সমাজের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, ঐতিহ্য লিখিত রুপ না থাকার কারনে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। যেগুলো হারিয়ে গেছে তা পূনরুদ্ধার করা আরো যে সমস্ত রুপ কথার গল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা যায় সে গুলো ম্রো সমাজের তরুন প্রজন্ম চর্চার সুযোগ পাবে। তিনি বিভিন্ন লেখকের ১৭টি বই উপহার প্রদান করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: