পটুয়াখালীতে হারিয়ে যাচ্ছে লন্ড্রি দোকান

রাকিবুল ইসলাম তনু, পটুয়াখালি | ১৬ আগষ্ট ২০২২, ০৬:০৭

সংগৃহীত

এক সময়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অলিগলিতে অহরহ দেখা যেতো লন্ড্রির দোকান। সেখানে কাপড় আয়রন (ইস্ত্রি) করে নিতে ভির জমাতেন মানুষেরা। কিন্তু সেই লন্ড্রি দোকানগুলো এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। নেই মানুষদের আনাগোনা। যেন বিদায় ঘন্টা বেজে চলেছে লন্ড্রির দোকানের।

পটুয়াখালী পৌর শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে, হাতে গোনা কয়েকটি লন্ড্রির দোকান। সেখানে তেমন নেই ইস্ত্রি করা গ্রাহক। এসব দোকানের মালিকের মধ্যে কেউ কেউ ২-১ টি কাপড় আয়রন করেছে আবার কেউবা বসে বসে অলস সময় পার করছে।

জানা যায়, প্রায় এক দশক আগে প্রত্যেকটি শহরে অলিগলিতে মোড়ে মোড়ে অনেকে পেশা হিসেবে কাপড়-চোপড় আয়রন (ইস্ত্রি) দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেখানে সকল পেশা-শ্রেণির মানুষগুলো নিখুঁত করে পরার জন্য থলে ভর্তিশার্ট-প্যান্ট-পাঞ্জাবী-শাড়ী-ওড়নাসহ বিভিন্ন বস্ত্রাদি বিদ্যুৎ চালিত ইস্ত্রি দিয়ে আয়রন করে নিতেন।

এখন উন্নয়নশীল দেশের আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে লন্ড্রির দোকানগুলো। সেই সময়ে ঘরে ঘরে ছিল না বিদ্যুৎ। আর মানুষ ব্যবহার করতো পলেষ্টার, টেট্রন, টরে কাপড়সহ অন্যান্য রকমের কাপড়। এসব কাপড় দিয়ে তৈরি করা পোশাকগুলো ধোয়ার পরই এলোমেলোভাবে ভাঁজ হয়ে থাকতো। এছাড়া অনেকে বস্ত্রাদিতে তরল জাতের মাড় দেওয়ার কারণেও ভাঁজ হতো। যার কারণে মানুষেরা ধোয়া পোশাক ইস্ত্রি না করা পর্যন্ত পরিধান করতেন না। কিন্তু সেইসব কাপড়ের স্থান দখল করে নিয়েছে উন্নত সুঁতোর তৈরী কাপড়াদি।

এখনকার শপিংমলে এসব কাপড়ের চাহিদা বেশি। কারণ, এই কাপড়গুলো দিয়ে পোশাক বানালে সেগুলো ধোয়ার পরও ভাঁজ হয় না। সোজা নিখুঁত অবস্থায় থাকে। এছাড়া বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে বিদ্যুৎ। এখন অনেকে নিজেরাই কিনেছে আয়রন মেশিন (ইস্ত্রি)। তাই যার যার পোশাক, তারা নিজ নিজ ঘরেই আয়রন করে চলেছেন। এছাড়া বর্তমান প্রজন্মের কাছে কাপড় ইস্ত্রি করাটাও অপছন্দনীয়।

বিদ্যমান পরিস্থিতে ধীরে ধীরে বিলুপ্তি পথে লন্ড্রির দোকানগুলো। অনেকে এ পেশা ছেড়ে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। এর মধ্যে কতিপয় দোকানি ধরে রেখেছে এ পেশাটি। এ দিয়ে কোনো মতে জীবন জীবিকা চলছে তাদের। তাই নানা কারণে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে লন্ড্রি দোকান।

বিধান দাস নামের এক আয়রনম্যান জানান, প্রায় ১৮ বছর ধরে এই কাজটি করছেন। এক দশক আগে দোকানে কাজের চাপে দম ফেলানোর সময় ছিলো না।

তিনি আরও বলেন, এখন প্রতিটি বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কারণে মানুষরা আগের মতো লন্ড্রির দোকানে আসেন না। অনেকে বাড়িতেই নিজ হাতে পরিবারের কাপড় ইস্ত্রি করে থাকেন। যার কারণের দুর্দিনে পৌঁছেছে এই পেশা।

আরেক লন্ড্রি দোকানি চিরঞ্জন জানান, এখনকার মানুষ পলেষ্টার, টেট্রন, টরে কাপড়ের পোশাক গায়ে দেন না। শপিংমলেও ওইসব কাপড় তেমন বিক্রিও হয় না। এর স্থলে দখল করে নিয়েছে উন্নত মানের বস্ত্রাদি। এগুলো পোশাক কখনো ভাঁজ পড়ে না। তাই মানুষ আর ইস্ত্রি করতে লন্ড্রি দোকানে তেমন আসে না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: