স্টেশনটিতে একটি কমিউটার ট্রেনের পাশাপাশি নিয়মিত যাত্রাবিরতি দেয় একটি আন্তনগর ট্রেনও। ওঠা-নামা করে যাত্রীরাও। কিন্তু স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঝুলছে তালা। নেই স্টেশন মাস্টারসহ কোনো জনবল। ট্রেন এলেও স্টেশনে বাজে না ঘণ্টা। স্টেশনে বিশ্রামাগার থাকা তো দূরের কথা নেই বসার ব্যবস্থাও। ফলে ঘাসে বসেই ট্রেনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণে যাত্রীরা।
পরিত্যক্ত এই রেলওয়ে স্টেশনটির নাম নয়নিবুরুজ। এটি পার্বতীপুর-পঞ্চগড় রুটে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত।
শনিবার দুপুরের দিকে স্টেশনটিতে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশত যাত্রী অপেক্ষা করছিলেন একটি ট্রেনের। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে। সবার অপেক্ষা দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুরের পার্বতীপুরগামী ‘কাঞ্চন কমিউটার’ ট্রেনের।
স্টেশনটি দেখভাল করে এমন কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। স্টেশনটিতে নেই কোনো যাত্রী সেবা। জরাজীর্ণ ভবনে তালা ঝুলছে। জনবল না থাকায় স্টেশনের সর্বত্র ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে আছে। এছাড়া স্টেশনের অবকাঠামো নড়বড়ে হওয়ায় চরম ভোগান্তির কথা জানান যাত্রীরা।
জানা গেছে, পার্বতীপুর-পঞ্চগড় রেলপথে অবস্থিত নয়নিবুরুজ স্টেশনটি ১৯৬৭ সালে তৈরি করা হয়। প্রতিদিন এই রুটে ‘কাঞ্চন’ কমিউটার ট্রেন এবং আন্তনগর ট্রেন ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’, ‘দ্রুতযান ও একতা এক্সপ্রেস’, ‘বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস’ ও ‘দোলনচাপা এক্সপ্রেস’ (আপ ও ডাউন) যাতায়াত করছে। এর মধ্যে ‘কাঞ্চন’ কমিউটার ট্রেন এবং আন্তনগর ‘দোলনচাপা এক্সপ্রেস’ নিয়মিত যাত্রাবিরতি দেয় এখানে। গড়ে প্রতিদিন দেড় শতাধিক যাত্রী ওঠা-নামা করে।
যাত্রীরা জানান, জৌলুসহীন এই স্টেশনে টিকেট বিক্রির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কোন যাত্রীই টিকিট কাটেন না। দোলনচাপা এক্সপ্রেসে ট্রেনের বগিতে টিকিট করার ব্যবস্থা থাকলেও কমিউটার ট্রেনটির ক্ষেত্রে অন্য স্টেশন থেকে টিকিট করতে হয়। এক্ষেত্রে অধিকাংশ যাত্রীই টিকিট ছাড়াই ভ্রমণ করছেন। শুধু টিকিট নয়, বুকিং ছাড়াই মালামালও পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে রেল বিভাগ।
ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি কমিউটার ট্রেনে দিনাজপুর যাবেন। এই ট্রেনে তিনি নিয়মিত যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, এখানে ট্রেনের সঙ্গে স্টেশনের কোন সম্পর্ক নেই। স্টেশনে কোন জনবল না থাকায় যাত্রীরা যে যার মতো দাঁড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকেন। সিগন্যাল দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় কখন ট্রেন আসবে তাও বোঝা যায় না।
বিমল চন্দ্র রায় নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার আগের এই স্টেশনটি বর্তমান নামেই চালু হয়। বিলীনের পথে স্টেশনটি এখনি সংস্কার করে নতুন করে চালু করা দরকার।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সোলেমান আলী ট্রেনে করে বিভিন্ন জায়গায় শুকনো মরিচ পাঠান। তিনি বলেন, স্টেশনে প্লাটফরম না থাকায় মরিচের বস্তা ওঠানামা করতে ঝামেলা হয়। স্টেশনে জনবল না থাকায় পণ্য বুকিং দিতে হয় অন্য স্টেশন থেকে। এতে যেমন সময় অপচয় হয় তেমনি ভোগান্তিও বাড়ে। এছাড়া প্লাটফরম না থাকায় এখান থেকে ট্রেনে ওঠা-নামায় বেগ পেতে হয়।
রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, সারাদেশে এমন ১৩৩টি স্টেশন রয়েছে। এর মূল কারণ হলো জনবল সঙ্কট। এজন্য গুরুত্ব বুঝে জনবল পদায়ন করে স্টেশন চালু রাখা হচ্ছে। আর নয়নিবুরুজ প্রাধান্যের দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকায় সেখানে জনবল দেয়া হচ্ছেনা। ইতোমধ্যে নতুন জনবল নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জনবল পর্যাপ্ত হলে এই সঙ্কট কেটে যাবে বলেও জানান তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: