রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেন তিনি। বুধবার (১৩ মার্চ) রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা।
এদিকে, সাদি মহম্মদের ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ গণমাধ্যমকে জানান, আজও তানপুরা নিয়ে তার বড় ভাই সংগীত চর্চা করেছেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৮ জুলাই মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ (৯৬) বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান শিল্পী সাদি মহম্মদ। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল। বুধবার সন্ধ্যার পরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে তার সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও, তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
সাদি মহম্মদ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহিদ পিতার সন্তান। তার বাবার নাম শহিদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহিদ শেখ কামালও।
একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি সাদী মোহাম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ।
সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: