সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত নিজের সব ধরনের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও সরানোর জন্য চিত্রনায়িকা পরীমনিকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সোমবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এফডিসির ঠিকানায় পরীমনি বরাবর ওই আইনি নোটিশ পাঠান দুই আইনজীবী।
নোটিশদাতা দুই আইনজীবী হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী ইসমাতুল্লাহ লাকী তালুকদার।
নোটিশে বলা হয়, ‘সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত আপনার সব অশ্লীল ছবি ও ভিডিও নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সব ধরনের অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য, যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থিরচিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই—তা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবেন। অন্যথায় প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, গত ১ সেপ্টেম্বর মাদক মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান পরীমনি। কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পরীমনির হাতের তালুতে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ লেখা ছিল। পরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পরীমনি মামলার শুনানির জন্য আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। সেদিনও তিনি হাতের তালুতে আরেকটি অশ্লীল কথা ‘ফাক মি মোর’ লিখে সবার সামনে তুলে ধরেন। এর ঠিক একদিন পর পরীমনি নিজের ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করেন; যেখানে তাঁর হাতে দেখা যায় জ্বলন্ত সিগারেট ও হাতের তালুতে লেখা সেই অশ্লীল বাক্য। তাঁর পরনে ছিল কালারফুল প্রিন্টের টপস, খোলা চুলে চোখে চশমা, পায়ে লাল-কালো রঙের কেডস। প্রায় অর্ধনগ্ন ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে পরীমনি লিখেছেন, ‘সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!’ পরীমনি তাঁর হাতের তালুতে যে সাইন দেখিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত অসম্মানজনক। কারণ, একেকটি ফিঙ্গার (আঙুল) দেখিয়ে, একেকটি মিনিং (অর্থ) বোঝানো হয়। এর মধ্যে ‘মধ্যমা আঙুল’ অশ্লীল ইঙ্গিত দিতে ব্যবহার করা হয়। এটি বিদেশে বহুল ব্যবহৃত। পরীমনির মতো একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর কাছ থেকে অশ্লীলতা প্রকাশে এসব প্রদর্শন কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
নোটিশে দুই আইনজীবী উল্লেখ করেন, পরীমনি গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার একটি হোটেলে ৩০তম বার্থডে পার্টির আয়োজন করেন। হোটেলে শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির জন্মদিনের জমকালো আয়োজন ও সাজ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারও করা হয়েছে। সেখানে পরীমনির সাজকে অশ্লীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্ট হওয়া খবরের কমেন্ট বক্স ভরে গেছে নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্যে। নারী নেটিজেনরাই (ইন্টারনেট ব্যবহারকারী) বেশি নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
পরীমনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, তাই অনেকেই তাঁর আচার–আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, নাচ, পোশাক, চলাফেরা অনুকরণ ও অনুসরণ করে থাকেন উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, এর ফলে তাঁর অশ্লীল বাক্য, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য, পোশাক ও কর্মকাণ্ডে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন। শিশু-কিশোরদের গণ্ডি ছোট থাকে। চোখের সামনে তারা যা দেখে, অনায়াসে তা আয়ত্ত করে ফেলে। টেলিভিশন, কম্পিউটার ও মুঠোফোনে এসব আলোচিত ঘটনার ছবি বারবার ভেসে উঠছে। সেগুলো তারা দেখছে। এর ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কারণ, হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ‘ফাক মি মোর’ ও ‘মিডল ফিঙ্গার’–এর ছবি দিয়ে কী বোঝাচ্ছে, তা তাদের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।
নোটিশে দাবি করা হয়, পরীমনি পর্নোগ্রাফি আইনে গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই সংজ্ঞা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতির সুন্দর ঐতিহ্য আছে। পরীমনির কাছ থেকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন শিল্পী হিসেবে সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ সবাই প্রত্যাশা করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: