ইন্টারনেটের প্রত্যাশিত গতি না পাওয়ায় মামলা করছেন গ্রাহকরা

সময় ট্রিবিউন | ৭ এপ্রিল ২০২১, ০০:৩৩

ছবিঃ সংগৃহীত

সময়টা ২০১৯ সালের এপ্রিল। বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিস্তৃত আকারে দক্ষিণ কোরিয়ার স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক (ফাইভজি) ব্যবহারের সুযোগ পায়। সে সময় টেলিকম অপারেটররা দাবি করেছিল, ফাইভজি এমন দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করবে, যার মাধ্যমে স্বচালিত গাড়ি, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি (ভিআর) থেকে ক্লাউড গেমিংয়ে এক নতুন যুগের সূচনা করবে।

দুই বছর পর এসে এখনো স্বচালিত গাড়ি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। পাশাপাশি ক্লাউড গেমও আগের ফোরজি নেটওয়ার্কেই চলছে। বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ ফাইভজি নেটওয়ার্কে প্রত্যাশিত গতি না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দেশটির গ্রাহকরা। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির কিছু গ্রাহক অপারেটরদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খবর এএফপি।

গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইভ জি নেটওয়ার্কে গড় ডাউনলোড গতি ফোরজি এলটিইর চেয়ে চারগুণ বেশি ছিল। যেখানে প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০ গুণ বেশি গতি হওয়ার কথা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটির ৭ কোটি ১০ লাখ মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ ফাইভ জি ব্যবহারকারী ছিলেন। আর ৭৩ শতাংশই ছিলেন ফোরজি ব্যবহারকারী। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, থ্রিজি নেটওয়ার্ক থেকে ফোরজিতে ব্যবহারকারীদের স্থানান্তর তুলনামূলক দ্রুততর ছিল। এলটিই নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার দুই বছর পর ২০১৩ সালের জুলাইয়ে ৪৪ শতাংশ ব্যবহারকারী ফোরজি ব্যবহার করতেন।

সরকারি লক্ষ্যের তুলনায় টেলিকম অপারেটররা তিনগুণ দ্রুত ফাইভজি বেস স্টেশন স্থাপন করেছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশজুড়ে ৯ লাখ ৭০ হাজার বেস স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। তবু প্রধান শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দ্রুতগতির এ ইন্টারনেট পরিষেবা। ২০২২ সালের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া দেশব্যাপী ফাইভজি কাভারেজের লক্ষ্য নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ফোরজি এলটিইর মতো ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে পারেনি পঞ্চম প্রজন্মের এ নেটওয়ার্ক। এজন্য ফাইভজি বাজার প্রতিক্রিয়াও দুর্বল রয়ে গেছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস অ্যান্ড ট্রেডের গবেষণা সহযোগী কিম জং-কি বলেন, ব্যবহারকারীরা যখন থ্রিজি থেকে এলটিইতে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন, তখন তাদের কাছে ভিডিও কলের মতো পরিষেবাগুলোয় অ্যাক্সেস ছিল, যা কম গতির জন্য আগে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলো বাদ দিয়ে ফাইভজির গতি খুব বেশি দ্রুত না।

এমন পরিস্থিতিতে দুর্বল সংযোগ ও হতাশাজনক গতির ক্ষতিপূরণ চেয়ে কিছু ক্ষুব্ধ গ্রাহক দেশটির তিনটি বড় টেলিকম অপারেটর এসকে টেলিকম, কেটি কর্প ও এলজি ইউপ্লাসের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জোউনের আইনজীবী কিম জিন-উকের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এ আইনি পদক্ষেপে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাদের যুক্তি, ব্যয়বহুল ফাইভজি নেটওয়ার্ক ফোরজির তুলনায় খুব বেশি উন্নত অভিজ্ঞতা দেয় না।

দেশটির সরকারের পক্ষ থেকেও ফাইভজি নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি নিয়ে স্বল্পতা স্বীকার করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় ভাইস মিনিস্টার চো কিয়েং-সিক বলেন, এখনো পর্যাপ্ত সংখ্যক জনগণকে ফাইভজির আওতায় আনা যায়নি। তাছাড়া ব্যবসায়িক ক্ষেত্রগুলোতেও ফাইভজির ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়ে কম রয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: