চাঁদে অভিযান চালাতে নভোযান তৈরির জন্য ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সঙ্গে ২৯০ কোটি ডলারের চুক্তি করে নাসা। তবে এই চুক্তির বিপক্ষে দুটি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের ভিত্তিতে তা স্থগিত করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।
দ্য ভার্জের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদে মানুষ অবতরণের জন্য প্রকল্পটির নাম হিউম্যান ল্যান্ডিং সিস্টেম (এইচএলএস)। সেটির কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টেবিলিটি অফিস। অর্থাৎ শিগগির আর চুক্তির প্রথম কিস্তির টাকা পাচ্ছে না স্পেসএক্স।
অ্যাপোলো অভিযানের পর এই প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠানোর উদ্যোগ নেয় নাসা। প্রকল্পটির জন্য গত ১৬ এপ্রিল ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটি নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। এর আগেও স্পেসএক্সের সঙ্গে কাজ করছে নাসা।
এমন বড় আকারের প্রকল্পের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনই কাল হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে অন্তত দুটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের কথা ছিল। নাসার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টেবিলিটি অফিসে অভিযোগ জানিয়ে বসে জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন এবং ডাইনেটিক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। একই চুক্তির জন্য এ দুটি প্রতিষ্ঠানও আবেদন করেছিল। ব্লু অরিজিনের বক্তব্য হলো, অন্যায্যভাবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলেছে নাসা। এতে কাজ সম্পাদনের জন্য নাসার বেঁধে দেওয়া সময়সূচি বাধাগ্রস্ত হবে বলে তাদের দাবি।
নাসার মুখপাত্র মনিকা উইট এক বিবৃতিতে বলেন, অভিযোগ আমলে নিয়ে গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টেবিলিটি অফিসে বিদ্যমান মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত এইচএলএস প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখতে স্পেসএক্সকে নির্দেশ দিয়েছে নাসা।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য নভোযান ‘স্টারশিপ’ তৈরির কাজ করছে স্পেসএক্স। ভবিষ্যতে এটির সাহায্যে চাঁদ ও মঙ্গলে মানুষ এবং মালামাল পরিবহনের কথা রয়েছে। মূলত দুটি কারণে স্পেসএক্সের স্টারশিপ বেছে নেয় নাসা। প্রথমত, একসঙ্গে বড় পরিমাণে মালামাল বহন করার সুযোগ থাকবে স্টারশিপে। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পটির জন্য স্পেসএক্সের ২৯০ কোটি ডলারের দর ব্লু অরিজিন এবং ডাইনেটিকসের চেয়ে বেশ কম।
এত দিন স্টারশিপের উন্নয়নের পেছনে অবদান রেখেছেন স্পেসএক্সের বিলিয়নিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক। এ পর্যন্ত স্টারশিপের বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ উড্ডয়নের চেষ্টা চালিয়েছে স্পেসএক্স। উড্ডয়নের পর অবতরণের সময় সবগুলো মডেলই ধ্বংস হয়েছে।
নাসার চুক্তি স্থগিত হলেও স্পেসএক্সের খরচে স্টারশিপের উন্নয়ন চালিয়ে নেওয়া হবে বলে ধারণা করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন পেলে স্টারশিপের সর্বশেষ প্রোটোটাইপ ‘এসএন১৫’-এর পরীক্ষা আগামী কিছুদিনের মধ্যেই চালানোর কথা রয়েছে।
নাসা জানিয়েছে, কংগ্রেসের কাছ থেকে পাওয়া তহবিলে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়াই সেরা সিদ্ধান্ত ছিল মনে করেছে তারা। চাঁদে পাঠাতে দুটি নভোযানের জন্য কংগ্রেসের কাছে ৩৩০ কোটি ডলার চেয়েছিল নাসা। প্রথম কিস্তিতে গত বছর নাসাকে ৮৫ কোটি ডলার দিয়েছিল কংগ্রেস।
চাঁদে নিরাপদ পরিবহনের জন্য স্পেসএক্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়াকে ‘প্রথম ধাপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন নাসার কর্মকর্তা ক্যাথি লিডারস। ভবিষ্যতে আরও চুক্তির সুযোগ আসবে বলেও সে সময় উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: