‘দোয়া করি, মেয়েটির ভাগ্যে সোনার হরিণটি যেন ধরা দেয়’

সময় ট্রিবিউন | ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:১৮

পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান ও চাকরিপ্রার্থী আছপিয়া ইসলাম কাজল-ফাইল ছবি

বরিশালে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েও স্থায়ী ঠিকানার অভাবে চাকরি না হওয়া আছপিয়া ইসলাম কাজল এবার তার চাকরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে আছপিয়া যেন তার চাকরিটা পায় সেজন্য আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামানও। আছপিয়ার চাকরির বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিআইজি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাস দেন।

ডিআইজি লিখেছেন, “আছপিয়ার চাকরি না পাওয়ার বিষয়টি দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে ফেসবুক, নিউজ পোর্টালে। আছফিয়ার পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যারা সরকারি চাকরির বিধান জানেন তারা আছপিয়ার পক্ষ নিতে পারছেন না। মূলত আছপিয়া বরিশালের স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে পারছেন না। সে সরল ভুলে ভোলার পরিবর্তে বরিশালে চাকরি প্রার্থী হয়েছে। আছপিয়াকে সান্ত্বনা দেই। বিধি মোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। আমি বিধি মানি, কিন্তু মেয়েটির প্রতি আমার কষ্টবোধ থেকেই যায়। যারা তাকে নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করছে, তাদের দোয়ায়, কাজে যদি মেয়েটি চাকরি পায় তাতে আমি অনেক খুশি হব। আর এর জন্য আমাকে যে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে তা সাহসে পরিণত হবে। দোয়া করি, মেয়েটির ভাগ্যে সোনার হরিণটি (চাকরি) যেন ধরা দেয়।”

আছপিয়া ইসলাম কাজলের মা ঝরনা বেগম বলেন, অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছি। তার চাকরি হয়েছে, কিন্তু আমার জায়গা-জমি না থাকায় চাকরিটি নাকি হবে না। এখন প্রধানমন্ত্রীর সুনজর চাই। যে করেই হোক আমার মেয়েকে চাকরিটি দিন। আমিতো আপনার (প্রধানমন্ত্রী) দেশের নাগরিক।

আছপিয়া ইসলাম কাজল বলেন, নিজের যোগ্যতায় প্রতিটি পরীক্ষায় পাস করেছি। জমি না থাকার কারণে আমার চাকরি হবে না কেন? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। আমিতো যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে সকল পরীক্ষায় পাস করেছি। তাহলে কেন আমার চাকরি হবে না?

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যোগ্য লোক দিয়ে দেশ পরিচালনার জন্য কাজ করছেন। সেখানে যোগ্য লোকের চাকরি জমি না থাকার কারণে হবে না, এটি সঠিক বলে মনে করি না। আমার চাকরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আছপিয়া ইসলাম কাজলের জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, তিনি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের মাতব্বর বাড়ির বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আছপিয়ারা সপরিবারে মাতব্বর বাড়ির মেজবাহ উদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়িতে থাকেন। তার বাবা মৃত শফিকুল ইসলাম ভোলা জেলার চরফ্যাশনের নিজের বাড়ি থেকে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে হিজলা উপজেলায় এসে বসবাস শুরু করেন।

প্রসঙ্গত, পুলিশে কনস্টেবল পদে বরিশাল জেলায় ১০ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন করেন আছপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া। ২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃতকার্য হন আছপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) হিজলা থানার এসআই মো. আব্বাস ভেরিফিকেশনে আছপিয়া বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: