মেয়ে বাচ্চারা ছেলে বাচ্চাদের মতই জীবন শুরু করে। কিন্তু প্রাইমারি ও হাই স্কুলের মাঝে কোনো একটা পর্যায়ে ছেলেমেয়েদের সামাজিক ভেদাভেদ তাদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করতে শুরু করে। এই কারণে মেয়েরা পিছিয়ে পড়তে পারে, আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে। এসময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন মেয়ে সন্তানের ‘মা’। তিনি নিজেও একজন নারী. যে কারণে ব্যক্তিগত অনেক কথা মা’কে জানানো মেয়েদের জন্য সহজ হয়।
সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে মা হিসেবে যেভাবে সাহায্য করতে পারেন আপনি।
১. দৃঢ় হতে উৎসাহ দিন
আপনার মেয়েকে তার চাহিদা বা দরকারের কথা বড় কারো কাছে বলতে শেখান। তাকে বলুন সহপাঠীদের সাথেও যেন নিজের প্রয়োজনের কথা স্পষ্টভাবে বলে। কেউ তার সাথে খারাপ আচরণ করলে যেন সে ঘাবড়ে গিয়ে নিজেকে গুটিয়ে না ফেলে। বরং দৃঢ়তার সাথে বলে যে এই আচরণটি তার ভালো লাগছে না।
২. স্পষ্টভাবে প্রশংসা করুন
সন্তানের বুদ্ধি বা মেধার প্রশংসা করার সময় স্পষ্ট উদাহরণ ব্যবহার করুন। তাকে বলুন, "তোমার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো" কিংবা "বাহ, তুমি তো ডাইনোসর সম্পর্কে অনেক কিছু জানো!"
শুধু ভালো না বলে সন্তানের কোন দিকটি ভালো তা নির্দিষ্ট করে দিলে তার নিজের শক্তির জায়গা সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়।
৩. মাঝে মাঝে কিছু বিষয় থেকে তার বাদ পড়ার কারণ বুঝতে সাহায্য করুন
আপনার মেয়েকে যদি কেউ তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে না ডাকে কিংবা খেলায় না নেয়, এখানে যে তার কোনো দোষ নেই, তা বুঝিয়ে বলুন। রিজেকশন বা প্রত্যাখ্যানের সাথে ধীরে ধীরে তাকে পরিচিত করান। যাতে কখনোই সে এজন্য নিজেকে দায়ী না করে।
৪. নিজে নিজে কাজ করাকে উৎসাহ দিন
হোমওয়ার্ক বা অন্য কোনো কাজে মেয়ে আটকে গেলে তাকে সাথে সাথে সাহায্য করার দরকার নেই। সাহায্য চাইলে তাকে আরো কিছুক্ষণ একা একা বিষয়টি দেখতে বলুন। নিজে থেকে চেষ্টা করে দেখতে বলুন। তাকে বলুন যে, সঙ্গে সঙ্গে সমাধান পেতে হবে, বিষয়টি এমন না।
৫. খেলাধুলায় আগ্রহী হলে তাকে উৎসাহ দিন
বর্তমানে মেয়েদের খেলাধুলার অনেক অপশন আছে। অনেকে সাইক্লিং পছন্দ করে, সাঁতার শিখতে চায়। যদি আপনার মেয়ে খেলায় আগ্রহী হয়, তাহলে তাকে খেলতে দিন। এতে করে সে নিজের সামর্থ্য কতটুকু তা বুঝতে পারবে।
৬. নিজে থেকে তার শক্তি কিংবা দুর্বলতা অনুমান করে নেবেন না
আপনার সন্তান মেয়ে বলে সে অংক পারবে না কিংবা খেলাধুলায় ভালো করতে পারবে না এমনটা ধরে নেয়া থেকে বিরত থাকুন। তার আগ্রহ ও পারফরম্যান্সের দিকে মনোযোগ দিন। তাহলেই তার শক্তি ও দুর্বলতার দিকগুলি ধরতে পারবেন।
৭. স্বাস্থ্যকর বডি ইমেজ তৈরিতে উৎসাহ দিন
আপনার মেয়ে যদি জিজ্ঞেস করে “আমি কি দেখতে সুন্দর?”, তাহলে উৎসাহের সাথে “হ্যাঁ” বলুন। তার চেহারার প্রশংসা করার পাশাপাশি কাজের দিকেও মনোযোগ দিন। যেমন, “জিমন্যাস্টিকস এ আজকে তোমাকে খুবই অসাধারণ লাগছিল” কিংবা “মঞ্চে তোমার চোখ চক চক করছিল” ইত্যাদি।
কিশোর বয়স শুরু করছে এমন মেয়েদের বুঝিয়ে বলুন যে ফ্যাশন ম্যাগাজিনের মডেলদের এত পারফেক্ট দেখতে লাগার কারণ তাদের পেছনে একটি পুরো টিম কাজ করে। কেউ পারফেক্ট দেখতে না হলে কোনো সমস্যা নেই।
৮. “মেয়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি”র জন্য তাকে জন্য প্রস্তুত করুন
অনেকেই বিশ্বাস করে মেয়েরা এমন অনেক কাজ করতে পারে না যেটা ছেলেরা করতে পারে। আপনার মেয়ে যদি এমন কোনো টিভি শো বা সিনেমা দেখে, যেখানে মেয়েরা পিছিয়ে থাকে ও ছেলেরা এসে তাদের বাঁচায়, তাহলে তার সাথে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন। মেয়ে হওয়ার কারণে যে কেউ দুর্বল না, তা বুঝিয়ে বলুন।
৯. ইতিবাচক নারী রোল মডেলদের সাথে নিজের মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দিন
খবর দেখার সময় বা পেপার পড়ার সময় মেয়েকে দেখান যে নারীরা আবিষ্কারক, ডাক্তার, পেইন্টার, খেলোয়াড় যেকোনো কিছুই হতে ও করতে পারে।
শক্তিশালী নারী চরিত্র আছে এমন বই পড়ার মাধ্যমেও মেয়েরা তাদের রোল মডেল খুঁজে পেতে পারে, নারীদের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। আপনি যদি এমন বই খুঁজে না পান, তাহলে বই পড়ে এমন বন্ধু, সহকর্মী এমনকি লাইব্রেরিয়ানদের সাহায্য নিতে পারেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: