বাংলাদেশে মেরুদণ্ডহীন চলচ্চিত্র নির্মাতা ছাইপাঁশ বানাচ্ছে: তসলিমা

সময় ট্রিবিউন | ১৯ জুলাই ২০২১, ০১:১৪

ছবিঃ সংগৃহীত

তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডির একটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, বাবার মুখে শুনতাম দিলীপ কুমার দিলীপ কুমার। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কূপমণ্ডুকদের কারণে ভারতীয় সিনেমা দেখানো নিষিদ্ধ হয়ে গেল। আত্মবিশ্বাসহীন মেরুদন্ডহীন বাঙালি চলচ্চিত্রনির্মাতারা ভাবতো ভারতীয় ছবি দেখানো হলে তাদের ছাইপাঁশ কেউ দেখবে না। তাই ভারতীয় ছবি আসা বন্ধ হলো, মহানন্দে তারা ছাইপাঁশ বানাতে সেই যে শুরু করেছে, আজও বানাচ্ছে। গত পাঁচ দশকে হাতে গোনা কিছু ভালো ছবি বানানো হয়েছে, এ আমি অস্বীকার করছি না। 

সত্তর দশকে বাংলাদেশে বানানো পরিচ্ছন্ন কিছু সিনেমা দেখেছি। আশির দশকে ভিডিও ক্যাসেটের যুগে শুরু হয়েছে আমার ভারতীয় আর্ট ফিল্ম দেখা। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, শ্যাম বেনেগাল, মোজাফফর, আদুর গোপাল্কৃষ্ণন এরকম পরিচালকের। দাদা মোগল এ আযম খুব দেখতো আর দিলীপ কুমার দিলীপ কুমার করতো। দিলীপ কুমারের যে সব ছবির ভিডিও পাওয়া যেত, দাদা দেখতে বাকি রাখেনি। দিলীপ কুমার আমি অনেক পরে দেখেছি ইউ টিউবের যুগে। মাঝখানে নব্বই দশক থেকে বিশ্বের আর্ট ফিল্ম দেখেছি আমি, এখনও অবশ্য তা-ই দেখি। 

ভারতবর্ষ দিলীপ কুমার ওরফে মহাম্মদ ইউসুফ খানকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়ে সমাধিস্থ করেছে, দেখে মন ভরে গেছে। তাঁকে অন্তত কাজি নজরুল ইসলামের মতো পাশের দেশে নিয়ে গিয়ে মসজিদের পাশে কবর দেওয়া হয়নি। 

দিলীপ কুমার তারকাদের তারকা। তারকারা দিলীপ কুমারের কাছ থেকে অভিনয় শিখেছেন, সংলাপ বলা শিখেছেন, ছবির গল্প (গঙ্গা যমুনা) লেখা শিখেছেন। চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাটের দশকে ছবির গল্পগুলো খুব সাধারণ হতো, শুরু থেকেই অনুমান করা যেত কী হতে যাচ্ছে। কিন্তু দিলীপ কুমারের অভিনয় অনুমান করা যেত না। কোন দৃশ্যে কী অভিনয় তিনি করবেন, তা আগে থেকে কেউ বলতে পারতো না। অবিশ্বাস্য অভিনয় করতেন দিলীপ কুমার। এখনও বিস্ময় জাগে যখন অভিনেতারা দাঁত মুখ খিচিয়ে রাগ প্রকাশ করতেন, চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করতেন, চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত ঘসে প্রতিশোধের স্পৃহা প্রকাশ করতেন, চিৎকার করে সংলাপ বলতেন, মেলোড্রামায় সয়লাব যখন সিনেমা, তখন দিলীপ কুমার কোনও কিছু না খিচিয়ে কোনও কিছু না কুঁচকে কোনও কিছু না ঘষে কী করে পারতেন অমন অভিনয় করতে! তাঁর অভিনয়কে অভিনয় বলে মনে হতো না, তিনি চরিত্র হয়ে উঠতেন, ক্যামেরার উপস্থিতি মনে হয় তিনি টের পেতেন না। একেই হয়তো বলে মেথোড অ্যাকটিং। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতীয় সিনেমার প্রথম মেথোড অ্যাকটর তিনিই ছিলেন। 

সেদিন পর্যন্তও এই কিংবদন্তী আমাদের আশেপাশেই ছিলেন, বেঁচে ছিলেন। একই সময়ে বসবাস তো একরকম সৌভাগ্য।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: