স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে আইজিপি’র কাছে সাংবাদিকের আবেদন

সময় ট্রিবিউন | ১৯ মে ২০২১, ০৫:৫০

যমুনা টিভি জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম এবং পাশে নির্যাতনের শিকার প্রথম আলোর জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম-ফাইল ছবি

অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট মামলায় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর সারাদেশে গণমাধ্যমকর্মীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন। সাংবাদিক রোজিনা ইসমামের বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ আনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবাদ হিসেবে নিজেদের ‘তথ্য চোর’ দাবি করে নিজেদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

সেই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এবার নিজেকে স্বেচ্ছায় কারাবরণের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকে (আইজিপি) খোলা চিঠি লিখেছেন যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম। মঙ্গলবার তাঁর ফেসবুকে একাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এই আবেদন করেন।

সাংবাদিক মনিরুল ইসলামের দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

বরাবর,

পুলিশ মহাপরিদর্শক

বাংলাদেশ পুলিশ।

বিষয়: স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে চাই।

জনাব

আমি, সিনিয়র রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন। আমি একজন অপরাধ মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিক।  পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিবেদন করেছি। প্রতিবেদনগুলো করতে গিয়ে তথ্য-প্রমাণ হিসেবে অনেক নথি জোগাড় করতে হয়েছে। জনস্বার্থে প্রকাশ করা জরুরি হওয়ায় এবং অনুসন্ধানের স্বার্থে সেই নথিগুলোর কোন কোনটি আমি লুকিয়েও সংগ্রহ করেছি। যা চুরি হিসেবে সাব্যস্ত হয়।

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে কথিত অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি মনে করি সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদক একই দোষে দুষ্ট!

এই বিবেচনায়,আমি নিজেও স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে চাই। 

নিবেদক

মনিরুল ইসলাম

সিনিয়র রিপোর্টার (ক্রাইম)

যমুনা টেলিভিশন

এর আগে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী বাদী হয়ে সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয়। মামলায় রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সাংবাদিকেরা এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবের প্রতি ধিক্কার জানান। সাংবাদিকেরা মন্ত্রী–সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: