মুসলমানি বা খাতনা করার আগে-পরে যেসব বিষয় জানা জরুরি

লাইফস্টাইল ডেস্ক | ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৩:৩৪

মুসলমানি বা খাতনা করার আগে-পরে যেসব বিষয় জানা জরুরি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টানা কয়েকদিন বন্ধ থাকলে ছেলে সন্তানদের খাতনা বা মুসলমানি করিয়ে থাকেন অধিকাংশ পরিবারের অভিভাবকরা। আমাদের দেশে গ্রাম অঞ্চলে অনেকেই হাজাম দিয়ে খাতনা করান সন্তানদের। কিন্তু এই আধুনিক সময় অনেকেই সন্তান যেন ব্যথা বা ভয় না পায়, সে জন্য ডাক্তার দিয়েও করিয়ে থাকেন খাতনা।

শহরাঞ্চলের বা শিক্ষিত মানুষরা সাধারণত শিশুর নিরাপত্তার কথা ভেবে চিকিৎসক দিয়ে খাতনা করিয়ে থাকেন। আর এই খাতনা বা সারকামসিশনের আগে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন ডা. রেজা আহমদ। সম্প্রতি এ ব্যাপারে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।

খাতনা করানোর কারণ : ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মুসলিম ছেলে শিশুদের খাতনা করানো হয়। আবার জন্মগতভাবে কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রেও খাতনা করানোর নির্দেশ দেয়া হয়। যেমন লিঙ্গের অগ্রভাগের ছিদ্র ছোট থাকলে, বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে। অনেকের চামড়া গ্লান্স লিঙ্গের পেছনে আটকা পড়ে ব্যথা হয়, তাদেরও খাতনা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।


মেডিকেলের ভাষায় এই দুটি অবস্থাকে বলা হয় ফাইমোসিস ও প্যারাফাইমোসিস। এছাড়া কারও কারও জন্য আবার খাতনা করা নিষেধ। অনেকেরই হিমোফিলিয়া নামক রক্তরোগ থাকে, তাদের খাতনা করতে নিষেধ করা হয়। কেননা, এই রোগীর কাটাছেঁড়া করলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হতে চায় না। এছাড়া অনেকের প্রস্রাবের নালির ছিদ্র ভিন্ন জায়গায় হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীদের নালি ঠিক করার জন্য অস্ত্রোপচারের সময় লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া পুনরায় নালি তৈরিতে প্রয়োজন হয়। এ জন্য তাদের খাতনা করতে নিষেধ করা হয়।

কোন বয়সে সন্তানের খাতনা করাবেন : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন সময় বেছে নেয়া হয় খাতনার জন্য। কোনো কোনো দেশে সন্তান জন্মের পরই খাতনা করানো হয়। আর এ সময় সন্তান ব্যথাবোধ খুব একটা করতে পারেন না। এতে অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষত শুকিয়ে যায় শিশুর। তবে সন্তানের খাতনার জন্য ৪ থেকে ১২ বছর বয়স ভালো। এ সময় খাতনা করলে শিশুর খুব বেশি সমস্যা হয় না।

বেশি ছোট শিশুদের খাতনা না করানো ভালো। তারা ভয় পায় ও কান্নাকাটি করে। আবার বয়স বেশি হলে তাদের অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ইরেকশনের জন্য রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর সন্তানের খাতনার আগে তাকে বাড়ি থেকে সবার সাহস দিতে হবে। কখনোই সন্তানকে না বলে, তার ইচ্ছার বিপরীতে খাতনা করাতে যাবেন না। দেখা যাবে জোর করে খাতনা করাতে গিয়ে সার্জারির সময় সন্তান আঘাত পেতে পারে বা সমস্যা হতে পারে।


এছাড়া আধুনিক এই সময় কিছু ডিভাইস রয়েছে। যা লেজারের মাধ্যমে খাতনার সার্জারি করে থাকে। তবে ডিভাইস দিয়ে খাতনা করানোর আগে জানতে হবে, ব্যবহারকারী চিকিৎসক এ ব্যাপারে কতটা প্রশিক্ষিত। আবার লোকাল অ্যানেসথেসিয়া বা জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমেও অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। যদি জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয় তাহলে সন্তানকে ৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে। কিন্তু দেশে অবেদনবিদ ও এনআইসিইউ সুবিধা নেই বলে অনেক সময় সন্তানের মৃত্যু হয়। এ জন্য সন্তানের খাতনা বা অস্ত্রোপচারের আগে অ্যানেসথেসিয়া কোন ধরবের ব্যবহার করা হবে, এ সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেয়া উচিত।

খাতনার পর জটিলতা এড়াতে করণীয় : খাতনার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারে যে জটিলতা বেশি হয়ে থাকে তা হচ্ছে রক্তপাতজনিত সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায় সন্তানকে বাড়ি আনার পর পুনরায় রক্তপাত শুরু হয়। রক্তপাত বেশি হলে কাপড় দিয়ে প্রথমে চেপে ধরে রাখতে হয়। তারপরও যদি রক্তপাত না কমে তাহলে চিকিৎসকের কাছে যান।

সন্তানের খাতনার পর লিঙ্গে কোনো ধরনের ইনফেকশন কিংবা অগ্রভাবে ক্ষত হয় কিনা, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য সঠিক ড্রেসিং ও ওষুধ খেতে হবে। এতে ঠিক হয়ে যায়। সন্তানের যদি লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়, তাহলে কখনো কখনো লিঙ্গের গোড়া তিন-চারদিন ফোলা থাকার সম্ভাবনা তাকে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।


এছাড়া খাতনার সপ্তাহখানেক পর (এক সপ্তাহ) ক্ষত জায়গা থেকে সামান্য রক্তমিশ্রিত পানির মতো তরল বের হতে পারে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঠিক হয়ে যায়। সন্তানকে নিয়মিত হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। এতে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়। খাতনার পর ঢিলে কাপড় বা লুঙ্গি পরান সন্তানকে, এতে ব্যথা কম অনুভব হবে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে যদি ক্ষত সেরে যায়, তাহলে আগের মতো স্বাভাবিক পোশাক পরতে পারবে শিশু।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: