মানসিক অসুস্থতায় প্রধান অনুভূতিগুলোর মধ্যে অন্যতম দীর্ঘদিন দুঃখবোধ, বিষণ্নতা, বিরক্তি বা কষ্ট, অনিয়ন্ত্রিত মেজাজ বা রাগ, অতিরিক্ত ভয় বা উদ্বেগ, নিজেকে গুটিয়ে রাখা, খাওয়া ও ঘুমের অস্বাভাবিক পরিবর্তন। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গে মুখের সুস্থের যোগসূত্রের কিছু বিষয় রয়েছে-
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে দাঁতের ভূমিকা
দাঁতে ক্যারিজ বা গর্ত বাচ্চাদের স্বাভাবিক একটি রোগ। স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের মধ্যে তাদের স্বভাবজনিত প্রিয় খাবার যেমন- আইসক্রিম, চকলেট, কোমলপানীয়, কৃত্রিম জুস, আলুর চিপস্, ফার্স্ট ফুড ইত্যাদির সাহায্যে তৈরি হওয়া দাঁতের গর্ত যখন বিনা চিকিৎসায় দাঁতের মধ্যকার মজ্জাকে আক্রান্ত করে তখন ব্যথা শুরু হয় ও পরে দাঁতের গোড়ায় ফুলে যায় আর দাঁতটি ভেঙে যায়। যেসব শিশুর মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে তাদের লেখাপড়ায় আগ্রহ, নিজের ওপর আস্থা, স্মরণশক্তি স্বাভাবিক, শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত পুষ্টি, প্রাণসঞ্চলতাসহ মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকে।
অসুস্থ দাঁত দিয়ে খাবার গ্রহণে কষ্টের কারণে অপুষ্টি, স্কুলের প্রতি অনিহা, লেখাপড়ায় অমনোযোগিতা প্রভৃতি হয়। দুধদাঁত সঠিক সময়ে না পড়ে আগে বা পরে পড়লে স্থায়ী দাঁত এলোমেলো হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে, তখন সৌন্দর্যের ঘাটতি থেকে মানসিক কষ্ট হতে পারে, ফলে স্বাভাবিক হাসিতে ব্যতয় ঘটে। হাসি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্যতম মাধ্যম, ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম হাতিয়ার।
যে কোনো বয়সের যে কেউ তার এলোমেলো ও বিবর্ণ দাঁত নিয়ে মনোকষ্টে ভুগতে পারে। বিবর্ণ দাঁতের অন্যতম কারণ সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ না করা, ধূমপান, পান জর্দা, আঘাত, দাঁত ক্ষয়, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
ডিমেনশিয়া
ডিমেনশিয়া এমন একটি সিনড্রোম যেখানে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং প্রতিদিনের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। অযত্ন বা অবহেলার কারণে দাঁতকে রক্ষা করতে না পারলে মাঝে ডিমেনশিয়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। ডিমেনশিয়ার একটি কারণ হিসেবে দাঁত না থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, যথাযথ চর্বণ মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবারহ করে, ফলে মস্তিষ্ক সতেজ থাকে। দাঁতবিহীন মুখ সৌন্দর্য বিনষ্ট করে।
মানুষ এখন সৌন্দর্যপিপাসু, অফিসে ইন্টারভিউ, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, বন্ধু-বান্ধব মহলে আড্ডা, অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ, নিজের যোগ্যতা উপস্থাপন, পাত্রপাত্রী নির্বাচন ইত্যাদিতে সুস্থ স্বাভাবিক ও সুন্দর দাঁত ভূমিকা রাখে। দীর্ঘমেয়াদি মাড়ি রোগ অনেক সময় রোগীদের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, মানসিক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মুখের সুস্থতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে সঠিক নিয়মে মুখের যত্নের কোনো বিকল্প নেই, মনগড়া পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ না করে নিয়মিত ও নিয়ম অনুযায়ী মুখ পরিষ্কারের অভ্যাস সিংহভাগ রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে। যে কোনো রোগকে বা মনোকষ্টকে পুষে না রেখে তার সুচিকিৎসা গ্রহণ জরুরি।
লেখক : রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: