নওগাঁর এক রাতে পাঁচ মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর

সময় ট্রিবিউন | ৩ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৩২

মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর। পোরশা উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের শিব মন্দিরে ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর পোরশায় এক রাতেই পাঁচটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে উপজেলার মশিদপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে শিবমন্দিরে, কালী ও সন্ন্যাস মন্দির এবং শরিয়ালা গ্রামে লক্ষ্মী ও মনসার মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।

মন্দিরগুলোতে থাকা প্রতিমার মাথা, হাত, পা–সহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরগুলোর ভাঙা প্রতিমাগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা ও পোরশা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুদেব সাহা বলেন, দুর্বৃত্তরা রাতে তাঁদের গ্রামে শিব, কালী ও সন্ন্যাস মন্দিরের তিনটি প্রতিমা ভেঙে ফেলেছে। তারা কালী ও সন্ন্যাস মন্দিরের প্রতিমার মাথা, হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। এ ছাড়া শিবমন্দিরে শিবের প্রতিমার মাথা ভেঙে দিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় একইভাবে পার্শ্ববর্তী গ্রাম শরিয়ালায় লক্ষ্মী ও মনসামন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। সোমবার রাত ১১টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টার মধ্যে দুর্বৃত্তরা প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করেছে। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় পেয়ে প্রশাসন ও পুলিশকে খবর দেন।

পরে প্রশাসন ও পুলিশের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে সকাল ১০টার দিকে ভাঙা প্রতিমাগুলো গ্রামের পুকুরে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

মশিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন বলেন, এই এলাকায় এর আগে এ ধরনের ঘটনার নজির নেই। গ্রাম দুটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মুসলিমদের কোনো রেষারেষি বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিরোধের ঘটনাও নেই। প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কারা সম্পৃক্ত থাকতে পারে, তার কিছুই আন্দাজ করা যাচ্ছে না। ঘটনা জানার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলাম। পরে খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আশা করি দ্রুত দোষীদের খুঁজে বের করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

ইউএনও নাজমুল হামিদ রেজা বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মন্দির কমিটি ও স্থানীয় লোকজন এ ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে করেননি। কী কারণে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তার তদন্ত হবে। দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) গাজিউর রহমান বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। পুলিশ এ ঘটনায় কাজ করছে। জমিজমা–সংক্রান্ত বা মন্দিরের কমিটি নিয়ে বিরোধ কিংবা অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, কোনো গোষ্ঠী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশে এসব মূর্তি ভাঙচুর করেছে কি না, এসব বিষয় মাথায় নিয়ে ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: