নাটকীয় কায়দায় পুলিশ পরিচয়ে কবি শফিক রিয়ান এর ফোন ছিনতাই

সময় ট্রিবিউন | ২ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৮

ছবিঃ সংগৃহীত

তরুণ উদীয়মান লেখক শফিক রিয়ানের মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়েছে। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নাটকীয় কায়দায় তার ফোনটি ছিনতাই হয় বলে তিনি জানান। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘটে যাওয়া এ ছিনতাইয়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন। ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরীও করেছেন এ লেখক।

লেখক শফিক রিয়ানের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল,

"জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো ছিনতাই চক্রের কবলে পড়লাম। গত পহেলা নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে ৩০০ ফিট থেকে ফেরার পথে আর্মি গল্ফ ক্লাবের বিপরীত পাশে এবং হোটেল র‍্যাডিসন ব্লু-এর কিছুটা পেছনে এই দুর্ঘটনার কবলে পড়ি।

শেওড়া বটতলা পাড় হওয়ার কিছুটা সামনে। বাইকের স্পিড তখন ৫০ কিমি/ঘন্টার আশেপাশে। রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়ার সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় খানিকটা কম। এমন সময় পেছন থেকে আসা একটা সিএনজির অনবরত হর্ণে বাইকের গতি কিছুটা কমিয়ে খানিকটা বামপাশ ঘেষে চলতে শুরু করি। এমন সময় আমার পেছনে আরেকটা কালো রঙের জিক্সার বাইক আসে। আমাকে থামার সংকেত দেয়। উল্লেখ্য যে, বাইক আরোহীর গায়ে ছিল পুলিশি বেশভূষা, ওয়াটকি, হ্যান্ডকাফ, হাইওয়ে টর্চ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম।

সময় তখন আনুমানিক রাত ৭:৪৫ থেকে ৮:০০ ঘটিকার মতো। আমাকে থামিয়ে তল্লাশি করতে চায়। পরিচয় জানতে চাওয়ায় নিজেকে ডিবি অফিসার পরিচয় দেয় চক্রের সেই সদস্য। তার বেশভূষা এবং আচরণে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাকে পুলিশ মনে করি এবং তার কথা শুনি।

আমাকে জানায়, তাদের কাছে ইনফরমেশন আছে একটা এফ-জেড বাইকে করে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচারের নিউজ আছে তাদের কাছে। আর তাদের চেকপোস্টের সিগন্যাল অমান্য করে আমি বাইক চালিয়ে চলে এসেছি। অথচ এমন কোনো চেকপোস্ট আমি অতিক্রম করিনি। আরো জানালো, তার পেছনে পুলিশ ফোর্স আসছে এদিকেই।

সে আমার এবং আমার পেছনে বসা ছোট ভাইয়ের ফোন চেক করতে চায়। কললিস্ট দেখতে চায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাকে ফোনের কললিস্ট চেক করতে দিই। তখন অব্দি আমার মনে হয়নি, সেনানিবাসের কোলঘেষা একটা জায়গায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে। ফোন চেক করার পর আমার ছোট ভাইয়ের ফোন ফেরত দিলেও আমার আইফোন ফেরত দেয়নি। জোরপূর্বক আমাকে বাইক থেকে নামিয়ে বাইকের দখন নেওয়ার চেষ্টাও করে।

বাইক থেকে না নামায়, বাইকের চাবি সে নিয়ে যায় এবং আমাকে একটু সামনে বাইক থামাতে বলে। আর আমিও সেই ছিনতাইকারীর বাইকের ঠিক ১০/১২ হাত সামনে হাতে ঠেলে বাইক নিয়ে স্ট্যান্ড করি। এর খানিক সময়ের মধ্যে এই দুই বাইকের মধ্যবর্তী ১০/১২ হাত ফাঁকা জায়গার মাঝখানে একটা সিএনজি এসে ব্রেক কষে। সাধারণ এমন জায়গায় যাত্রীরা উঠানামা করে না। সেই সিএনজির উদ্দেশ্যই ছিল, দুই বাইকের মাঝে একটা দেয়ালের মতো তৈরি করে আমাকে কোণঠাসা করে দেওয়া।

তখনই আমি আমার পকেটে থাকা অন্য ফোনটা বের করে উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিবি– জনাব আরিফুল ইসলাম মিঠু ভাইকে ফোন করি। তাকে বিস্তারিত জানানোর পর উনি জানান, এরা ছিনতাইচক্রের লোক। এমন কৌশলী উপায়েই তারা এই র‍্যাকেড চালায়।

আমাকে ফোনে কথা বলতে দেখে তারাও সরব হয়ে যায়। সাথে সাথেই বাইক আরোহী প্রথম সেই সদস্য দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে চলে যায়। এবং তার পরপরই সিএনজিটাও সেই একই দিকে চলে যায়।
সবশেষে ৯৯৯ এ কল দিই। ২০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে উপিস্থিত হয়। থানায় গিয়ে জিডি করলাম। ক্যান্টনমেন্ট থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব সাব্বীর মুনশির থেকে জানতে পারি, এর আগেও এসব এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে৷

মোবাইল ফোনটা চলে গেলো। বাইকটাও নিয়ে যেতে পারত আর কিছুটা সময় পেলে কিংবা আমার বুঝতে আর খানিকটা দেরি হলে। হয়তো জীবনও যেতে পারত তাদের হাতে। কোনো প্রকার আঘাত পাওয়া ছাড়াই স্রেফ একটা ফোন হারানোর বিনিময়ে হলেও সুস্থভাবে ফেরত আসতে পারায়, উপরওয়ালার নিকট আমি কৃতজ্ঞ। সবাই সাবধানে থাকবেন, সুস্থ থাকবেন৷ পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে কারো পুলিশি পরিচয়ে বিশ্বাস করবেন না। কেউ থামার সংকেত দিলেও, মোটামুটি জনসমাগম আছে, এমন জায়গা দেখে থামবেন।"



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর