আ.লীগ নেতা নাসিমের মৃত্যু নিয়ে কটূক্তি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বেরোবি শিক্ষক মুনিরা

সময় ট্রিবিউন | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:০০

সিরাজাম মুনিরা-ফাইল ছবি

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজাম মুনিরাকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

সোমবার রংপুরের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ড. মো. আব্দুল মজিদ শুনানি শেষে মুনিরাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন তালুকদার।

তিনি বলেন, সোমবার মামলার দিন ধার্য ছিল। বিবাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় শুনানি শেষে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

তবে এ বিষয়ে জানতে সিরাজাম মুনিরার মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।

এদিকে ওই শিক্ষককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইজার আলী জানান, গত মার্চ মাসে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছিলো। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির মতামত না পাওয়ায় সিরাজাম মুনিরাকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলাম।

গত বছরের ১৩ জুন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার মৃত্যু নিয়ে শিক্ষক মুনিরা ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেন। সেই পোস্টে তিনি লিখেন “যোগ্য নেতৃত্বে দেশ নাসিম্যা মুক্ত হলো।”

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পোস্ট নিয়ে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে পোস্টটি মুছে দেন মুনিরা। কিন্তু, পোস্টের স্ক্রিনশট দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় তিনি ক্ষমা চেয়ে আরেকটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, “একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদের মৃত্যু সম্পর্কে ভিন্নভাবে অভিমত ব্যক্ত করা ঠিক নয়। কর্মফল যাই হোক না কেন; মৃত্যু সব সময় বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। এটি অনুধাবনের পরপরই আমি আমার বক্তব্য থেকে সরে এসেছি। সেই সঙ্গে আমার আগের দেয়া পোস্ট সরিয়ে নিয়েছি। তারপরও যারা আমার পোস্টে আঘাত পেয়েছেন; তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।”

কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ১৩ জুন রাতে তাজহাট থানায় একটি মামলা করেন রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়াও এবিষয়ে আলাদা একটি অভিযোগ দায়ের করেন তাজহাট থানায়। পরবর্তীতে দুটি অভিযোগ একসঙ্গে সম্পূরক করে মামলা গ্রহণ করে তাজহাট থানা পুলিশ। পরে ওই দিন রাতেই মুনিরাকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সর্দার পাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ১৭ জুন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

সেদিন গণমাধ্যমে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেছিলেন, তার দায়ের করা মামলায় সিরাজাম মনিরাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু গ্রেফতারের ৩০ মিনিট পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন এসে প্রশাসনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর চেষ্টা করেছে।

তিনি সেসময় বলেছিলেন, এই প্রশাসনই (ড. কলিমউল্লাহ নিয়ন্ত্রিত) তো সিরাজুম মনিরাকে নিয়োগ দিয়েছে, সুতরাং তারাও দায় এড়াতে পারে না।

পরে গত বছরের ৫ আগস্ট কারাগার থাকা মুনিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।

সিরাজুম মুনিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে ২০১৯ সালে বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ছাত্রজীবনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ছিলেন।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন তবে এখনো কাগজপত্র পাননি। আদালত কী নির্দেশনা দিয়েছেন তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান রেজিস্ট্রার।

এদিকে মামলা থেকে সিরাজাম মুনিরার অব্যাহতির খবরে ফুঁসে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এবিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, সিরাজাম মুনিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে দেশের একজন স্বনামধন্য রাজনীতিবিদের মৃত্যুর ঘটনায় কটূক্তির পরও মামলা থেকে দায়মুক্ত দেওয়া ঠিক হয়নি। অবশ্যই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: