সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকায় শুরু হয়েছে গণহারে করোনার টিকা কার্যক্রম। শুক্রবার ও শনিবার এই দুই দিনে ২ হাজার টিকা দেয়া হয়েছে এলাকার বাসিন্দারের। তবে এবিষয়ে কিছুই জানেনা স্বাস্থ্য বিভাগ। সংশ্লিষ্টদের অবগত না করে গণটিকাদান এক সপ্তাহ আগে শুরুর কারণে তদন্ত কমিটি করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে টিকাদান শুরু করা অভিযুক্ত পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) বলছেন তিনি হুইপ সামশুলকে অবগত করেই এ কর্মসূচি শুরু করেছেন। অন্যদিকে হুইপ অস্বীকার করেছেন একথা।
জানা গেছে, হুইপের গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নে এই গণটিকা দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার শোভনদন্ডী আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং আজ শনিবার শোভনদন্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চালানো হয়। আজ শনিবার পর্যন্ত দুদিনে প্রায় দুই হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরু হবে। এর আগে শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয়ে টিকা দেওয়া হবে।
এবিষয়ে শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদানের বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচএফপি), সিভিল সার্জন কিংবা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কেউ আগে থেকে জানতেন না।
এই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেন।
রবিউল হোসেন দাবি করেন, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী তাঁকে এলাকার লোকজনকে টিকা দিতে বলেছেন। তবে হুইপ বলেছেন, তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বললে তো কার্যক্রমের উদ্বোধনই করতেন।
সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে রবিউল পটিয়া কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারি চাকরিতে ঢোকেন। রবিউল দাবি করেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর মৌখিক নির্দেশনায় তিনি শুক্রবার থেকে দুদিন ধরে টিকা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার বলেন, কারও নির্দেশনা ছাড়া রবিউল এভাবে টিকা দিতে পারে না। সরকারিভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরু হবে ৭ আগস্ট। এর আগে নিবন্ধনবিহীন লোকদের টিকা প্রদান ঠিক হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রবিউল হোসেন বলেন, আমি শোভনদন্ডী এলাকার বাসিন্দা। এলাকার লোকজন আমাকে ধরেছেন নিবন্ধনের পরও তাঁরা টিকা পাচ্ছেন না। আমি হুইপ স্যারকে (সামশুল হক চৌধুরী) বলতে বলেছি। পরে হুইপ আমাকে বলেছেন, যদি পারি তাহলে ব্যবস্থা করতে। তাই আমি সেখানে গিয়ে দুদিনে দুই হাজার টিকা দিয়েছি। সবাই নিবন্ধিত। তাঁদের এসএমএস না আসাতে টিকা দিতে পারছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা মানবিক সেবামূলক উদ্দেশ্যে করেছি। কোনো আর্থিক বা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নয়।
তবে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, আমার কোনো বিষয় নেই। ওটা ডাক্তারদের বিষয়। তবে ৭ তারিখের আগে দেওয়া তো উচিত নয়। আমি যদি দিতেই বলতাম, তাহলে তো কার্যক্রমের উদ্বোধন করতাম।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: