কে এই হেলেনা জাহাঙ্গীর?

সময় ট্রিবিউন | ৩০ জুলাই ২০২১, ২২:৪৯

হেলেনা জাহাঙ্গীর-ফাইল ছবি

সম্প্রতি ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের পোস্টারকে ঘিরে বিতর্কিত শুরু হয় আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে। তবে এ বিতর্কিত নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই একের পর এক বিতর্কিত কাজ করেই যাচ্ছেন। নিজেকে গায়িকা পরিচয় দেয়া, ইফতারে সিনেমার গান গাওয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও বিতর্কিত কথা বলা এমন কোন হীন কাজ নেই যা করেননি হেলেনা জাহাঙ্গীর। সম্প্রতি চাকরীজীবী লীগ নামের সংগঠন খোলার কারণে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ বাতিল করা হয় তার।

সবশেষ বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে গুলশানের বাসা থেকে তাকে আটক করে র‍্যাব। তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা ও হরিণের চামড়া জব্দ করা হয়েছে।

ফেসবুকে বেশ সক্রিয় হেলেনা জাহাঙ্গীর মূলত একজন নারী উদ্যোক্তা হলেও কিছুদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।  সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ আসনের উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েও আলোচনায় আসে।

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর। পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সদস্য তিনি।

জয়যাত্রা নামে একটি আইপি টেলিভিশনেরও মালিক তিনি। এছাড়া প্রিন্টিং, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সব মিলিয়ে ১০ হাজারেও বেশি কর্মী আছে তার এসব প্রতিষ্ঠানে।

কুমিল্লার মেয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরে ব্যবসায়ী হিসেবে উত্থান খুব বেশিদিন আগের নয়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় তার। হেলেনার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর। বিয়ের পর শেষ করেন স্নাতকোত্তর। এরপর উদ্যোক্তা হিসেবে পথ চলা শুরু।

হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে। বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। হেলেনার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামে ফিরে যান হেলেনা।

হেলেনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের ছয় বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১-তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে হেলেনা শুরু করেন প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি ব্যবসা। নিট কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট লিমিটেড দিয়ে শুরু করে জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় একে একে তিনি গড়ে তোলেন জয় অটো গার্মেন্টস লিমিটেড, জেসি এমব্রয়ডারি অ্যান্ড প্রিন্টিং এবং হুমায়রা স্টিকার লিমিটেড। সবকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।

হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্যাপিটাল ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, বনানী সোসাইটি, গুলশান জগার্স সোসাইটি ও গুলশান হেলথ ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত।

তবে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের পর হেলেনার মেয়ে জেসিয়া আলম বলেছেন, তাঁর মা অনেক শক্তিশালী। হেলেনা জাহাঙ্গীরের কিছুই হবে না।

হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে রাজনীতিতে বেশ সমালোচনা চলছে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারশন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সাথে তোলা ছবি ভাইরাল হয়েছে।

তবে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে তাঁর পরিবার শক্ত অবস্থানে আছেন। হেলেনাকে আটকের পর গণমাধ্যমে কথা বলেছেন মেয়ে জেসিয়া আলম। মদ উদ্ধারের বিষয়ে জেসিয়া বলেন, আমার ভাইয়া মদ পান করে। সেগুলোই বাসায় ছিল। তবে ভাইয়ার মদ পানের লাইসেন্স রয়েছে। পাসপোর্টও আছে।

হরিণের চামড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হেলেনার মেয়ে বলেন, ভাইয়ার বিয়ের সময় মায়ের সঙ্গে রাজনীতি করা নেতানেত্রীরা মিলে ওইটা গিফট করেছে। সেটি ওয়ালে ঝোলানো ছিল।

ক্যাসিনোর সরঞ্জামাদির বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাসিনোর চিপস ওগুলো। আমরা নিজেরাই খেলতাম আর সময় কাটাতাম। তবে ক্যাসিনো খেলতে যে বোট আর সরঞ্জাম লাগে তা নেই আমাদের। ধরেন বাসায় তাস খেলে না কেউ? সে রকম একটা বিষয়। জাস্ট ক্যাসিনোর চিপগুলো ছিল বাসায়। মানুষ গেম খেলতে পারে না? ওরকম।

বিদেশি মুদ্রার বিষয়ে জানতে চাইলে জেসিয়া বলেন, আমরা প্রায়ই বিদেশে যাই। একাধিক দেশে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। বিদেশ থেকে আসার পর যে মুদ্রাগুলো বেঁচে যায় সেগুলো তো রাস্তায় ফেলে দিতে পারি না। ওইসব মুদ্রা থেকে গেছে।

জেসিয়া বলেন, র‍্যাব আমাদের বাসা থেকে যেসব উদ্ধার করেছে সবকিছুই অবৈধ ঠিক আছে তবে এভাবে করে বিনা ওয়ারেন্টে সার্চ করা ঠিক নয়।

অভিযানকে কী হিসেবে দেখছেন জানতে চাইলে হেলেনার মেয়ে জেসিয়া বলেন, আমাদের বাসায় ইলিগ্যাল মালামাল রয়েছে মানলাম। তাই বলে ওরকমভাবে অভিযান করা যায়। কোনো ওয়ারেন্ট নেই, সার্চ ওয়ারেন্ট নেই হুট করে ঢুকে গেল আর অভিযান চালাল। কোনো কো-অপারেট নেই।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: