করোনাকালে দেশে দৈনিক গড়ে ১৭টি ধর্ষণ মামলা

সময় ট্রিবিউন | ২৭ জুলাই ২০২১, ২০:২৭

ধর্ষণ-প্রতীকী ছবি

অতিমারি করোনাভাইরাসের শুরু থেকে দেশে চুরি, ছিনতাই, দস্যুতা, ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন—এই পাঁচ ধরনের অপরাধ বেড়েছে। ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার বাইরে দেশে প্রচলিত যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়, তার মধ্যে চুরি, ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া ২০২০ সালের সারা দেশের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আগের বছরের (২০১৯) তুলনায় না বাড়লেও এই সময়ে দেশে খুন ও মাদকসংক্রান্ত অপরাধের ঘটনাও ঘটেছে উল্লেখসংখ্যক হারে।

সারা দেশের থানাগুলোতে দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে পুলিশ সদর দপ্তর অপরাধের যে পরিসংখ্যান তৈরি করেছে, তাতে দেখা যায়, গত বছর সারা দেশে ৬ হাজার ৫৫৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ দেশে দৈনিক গড়ে ১৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

এর আগের বছর, ২০১৯ সালে ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৫ হাজার ৮৭২টি। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, কয়েক বছর ধরেই ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যার প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল।

পাশাপাশি শিশু নির্যাতনের ঘটনাও পাঁচ বছর ধরে বেড়ে চলছে। গত বছর শিশু নির্যাতনের ঘটনা ছিল আড়াই হাজারের বেশি। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৬৩।

গত বছর দেশে চুরির ঘটনা ঘটেছে ৯ হাজার ৭৩৩টি। এর মধ্যে আড়াই হাজার সিঁধেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২০১৯ সালে মোট চুরির ঘটনা ছিল ৯ হাজার ৩১৯টি।

২০২০ সালে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে ৯৭৮টি। আর ছিনতাই (দ্রুত বিচার আইনে মামলা) ৮৭১টি। এর মধ্যে আগের বছরের তুলনায় ছিনতাই বেড়েছে ৩৪০টি। আর দস্যুতা বেড়েছে ৮২টি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকালে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় পারিবারিক সহিংসতাও বাড়ছে। আবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি হয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে।

আগের তুলনায় না বাড়লেও ২০২০ সালে দেশে সাড়ে তিন হাজারের বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৫৩। তবে করোনাকালে বেশ কয়েকটি নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোতে পরিবারের সদস্য বা স্বজনেরাই জড়িত। স্ত্রী, সন্তান বা মা-বাবাসহ পরিবারের ছোট্ট শিশুকে পর্যন্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। করোনাকালে নানামুখী দুশ্চিন্তা, হতাশা ও অস্থিরতাকে এ জন্য দায়ী মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকেরা।

সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের ফলে দেশে অ্যাসিড–সন্ত্রাস অনেকাংশে কমে এলেও গত বছর ১৬টি অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আগের বছর এমন ঘটনা ছিল ১২টি।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি—মিডিয়া অ্যান্ড অপারেশনস) হায়দার আলী খান বলেন, করোনাকালে চুরি, ডাকাতি ও রাহাজানি বাড়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নেতৃত্ব ও আইজিপির বিচক্ষণতার কারণে সেভাবে বাড়েনি। এ সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ–সম্পর্কিত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে বা কিছু পরিবর্তন হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে নারী নির্যাতন, খুন, ডাকাতি, অপহরণ, পুলিশ আক্রান্ত, অস্ত্র আইনে, বিস্ফোরক আইনের মামলা তুলনামূলক কম হয়েছে। গত বছরে সব ধরনের অপরাধে দেশে মোট মামলা হয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৬টি। এর আগের বছর ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪টি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: