গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা সেই ইউএনওর পদাবনতি

সময় ট্রিবিউন | ২৪ জানুয়ারী ২০২২, ০৭:২৪

ফাইল ছবি

ভূমিহীনদের জন্য সরকারের নেওয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রহমানকে ষষ্ঠ গ্রেড থেকে সপ্তম গ্রেডে অবনমন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

একই সঙ্গে তাঁকে আত্মসাৎকৃত পুরো টাকা নিজের বেতন-ভাতা থেকে পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শফিকুর রহমান বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগে ন্যস্ত আছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অদক্ষতা, অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণতার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী এখন তাঁকে দুই বছর সপ্তম গ্রেডে থাকতে হবে। দুই বছর পর আবার তিনি আগের পদ ফিরে পাবেন। তবে তিনি বকেয়া টাকা পাবেন না।

প্রশাসন ক্যাডারের ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা শফিকুর রহমান (পরিচিতি নম্বর ১৬৩৬২) ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ইউএনওর দায়িত্ব পালন করেন।

প্রশাসন ক্যাডারের ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা শফিকুর রহমান (পরিচিতি নম্বর ১৬৩৬২) ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ইউএনওর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আলী আজম বলেন, গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে যিনিই অনিয়ম করবেন, তাঁকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির মধ্যে পড়তে হবে। গাইবান্ধার সাবেক ইউএনও শফিকুর রহমানকে শাস্তি প্রদানের মধ্য দিয়ে অন্যদের কাছে সরকারের শক্ত অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিভাগীয় মামলা হয়। তিনি ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন পরের বছরের ২১ জানুয়ারি। একই বছরের ৮ মার্চ তাঁর ব্যক্তিগত শুনানি নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শুনানিতে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এরপর তাঁকে দ্বিতীয় দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে সেখানেও তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।

এরপর শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পিএসসি থেকেও শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

গাইবান্ধা সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিপরায়ণতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮-এর আলোকে তাঁকে দুই বছরের জন্য নিম্নপদে অবনমন করার সিদ্ধান্ত হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, গাইবান্ধা সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিপরায়ণতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮-এর আলোকে তাঁকে দুই বছরের জন্য নিম্নপদে অবনমন করার সিদ্ধান্ত হয়। তাঁর বর্তমান ষষ্ঠ গ্রেড (বেতন স্কেল ৩৫,৫৫০-৬৭,০১০) থেকে সপ্তম গ্রেডে (বেতন স্কেল ২৯,০০০-৬৩,৪১০) সহকারী সচিব পদে অবনমন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আত্মসাৎকৃত ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা তাঁর বেতন-ভাতা থেকে আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসনসচিব জানান, এ মাস থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে এবং আত্মসাৎকৃত টাকা তাঁর বেতন-ভাতা থেকে কাটা শুরু হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: