১৪ রানে ৬ উইকেট, ২৯ রানে ৮টি। পরিসংখ্যান ঘাঁটা ছাড়া উপায় ছিল না। লঙ্কানরা যে রীতিমত দুঃস্বপ্নের ব্যাটিং করেছে!
পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডটি ৩৫ রানের, আর বিশ্বকাপে সেটি ৩৬। দুই রেকর্ডই হুমকির মুখে ছিল।
ভাগ্য ভালো লঙ্কানদের। ওই দুই লজ্জার রেকর্ডে নাম লেখাতে হয়নি। তবে তারা বিশ্বকাপের মঞ্চে যা করেছে, সেটাও কম লজ্জার নয়। ভারতীয় বোলিং তোপে ১৯.৪ ওভারে মাত্র ৫৫ রানেই গুটিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। ভারত ম্যাচটি জিতেছে ৩০২ রানে।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে রানের হিসেবে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। প্রথমটি এবারেরই বিশ্বকাপে গড়েছে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩০৯ রানের জয় তুলে নিয়ে।
এতদিন বিশ্বকাপে কোনো দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়টি ছিল ২৭৫ রানের। সেই রেকর্ডও ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে ২৭৫ রানে হারিয়েছিল অসিরা। ভারত আজ দ্বিতীয় স্থানটি দখলে নিয়েছে।
একইসঙ্গে সবার আগে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে ভারতের। ৭ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট এখন ১৪। বাকি দুই ম্যাচ হারলেও সেরা চার থেকে ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই রোহিতদের।
আজ লঙ্কানদের লক্ষ্য ছিল ৩৫৮ রানের। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ভারতীয় পেসারদের তোপের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ শামিরা বলতে গেলে ছেলেখেলা করেছেন লঙ্কানদের নিয়ে।
প্রথম পাঁচ ব্যাটারের তিনজন শূন্য, দুইজন আউট হয়েছেন ১ রান করে। ছয় নম্বরে নেমে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ১২ আর শেষদিকে কাসুন রাজিথা ১৪ এবং মাহিশ থিকসানা অপরাজিত ১৪ রান না করলে আরও বড় লজ্জায় পড়তো শ্রীলঙ্কা।
লঙ্কানদের ইনিংসে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মূল হোতা মোহাম্মদ শামি আর মোহাম্মদ সিরাজ। শামি ১৮ রানে ৫টি আর সিরাজ ১৬ রানে নেন ৩টি উইকেট।
এর আগে বিরাট কোহলি, শুভমান গিল আর শ্রেয়াস আয়ারের ব্যাটে চড়ে ভারত দাঁড় করায় ৮ উইকেটে ৩৫৭ রানের বড় পুঁজি।
অথচ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল ভারত। দলীয় ৪ রানের মাথায় রোহিত শর্মাকে (৪) বোল্ড করে লঙ্কান শিবিরকে উচ্ছ্বাসে ভাসান দিলশান মাদুশঙ্কা। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গেছে এরপর।
শুভমান গিল আর বিরাট কোহলি দ্বিতীয় উইকেটে ১৭৯ বলে গড়েন ১৮৯ রানের বড় জুটি। যে জুটিতে ভর করেই বড় সংগ্রহ গড়েছে ভারত।
যেভাবে খেলছিলেন। সেঞ্চুরিটা প্রাপ্যই ছিল গিল-কোহলির। কিন্তু মাত্র ৮ রানের জন্য গিল পারলেন না তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে। কোহলিও সেই পথেই হাঁটলেন।
৯২ বলে ১১ চার আর ২ ছক্কায় সমান ৯২ রান করে মাদুশঙ্কার কাটারে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন গিল। নিজের পরের ওভারে এসে মাদুশঙ্কা তুলে নেন সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় থাকা আরেক ব্যাটার বিরাট কোহলিকেও।
এবারও সেই কাটার। কোহলি বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন শর্ট কভারে। ৯৪ বলে ১১ বাউন্ডারিতে ৮৮ রানেই থামে কোহলির ইনিংস।
এরপর লোকেশ রাহুল (১৯ বলে ২১), সূর্যকুমার যাদব (৯ বলে ১২) ইনিংস বড় করতে না পারলেও ঝোড়ো ব্যাটিং করে দলকে সাড়ে তিনশর দরজায় নিয়ে গেছেন শ্রেয়াস আয়ার। যদিও তাকেও ফিরতে হয়েছে সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে।
৫৬ বলে ৩ চার আর ৬ ছক্কায় ৮২ রানের মারকুটে ইনিংস খেলে সেই মাদুশঙ্কার শিকার হন শ্রেয়াসও। শেষদিকে রবীন্দ্র জাদেজা ২৩ বলে করেন হার না মানা ৩৪।
শ্রীলঙ্কার পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা ৮০ রানে একাই নেন ৫টি উইকেট।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: