আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ‘লাইলাতুম মিন নিসফা শাবান’। এটি ‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘শবে বরাত’ নামে বেশি পরিচিত। মুসলমানরা রাতটিকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
শবে বরাতে নামাজের নিয়ম
শবে বরাতে নফল নামাজ পড়া উত্তম। তবে এই রাতে নফল নামাজ পড়ার আলাদা কোনো নিয়ম বা নিয়ত নেই। অন্যান্য নফল নামাজ যেভাবে পড়া হয়, এ দিন রাতেও যেভাবে স্বাভাবিক নিয়ম নফল নামাজ পড়তে হবে। আলাদা করে কোনো নিয়ত করতে হবে না।
কেউ এ রাতে নফল নামাজ পড়ার আলাদা কোনো নিয়ম বা নিয়ত সাব্যস্ত করলে তা বিদয়াত বলে গণ্য হবে। কারণ, শবে বরাতে নামাজ পড়ার কোনো নিয়ম বর্ণনা করেননি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসল্লাম বর্ণনা করেননি, সাহাবিরা পালন করেননি- এমন কোনো বিষয়ে ইবাদত বা নির্দিষ্ট করে আমল তৈরি করলে বিদয়াতের অন্তর্ভুক্ত। বিদয়াত আবিষ্কারকদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আল্লাহর রাসূল।
বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসল্লামের আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো, (দীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। (দীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত সবকিছুই বিদআত। প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম, হাদিস, ১৫৩৫; নাসায়ি, হাদিস, ১৫৬০)
শবে বরাতের নামাজের দোয়া
শবে বরাতে একজন মুসলিম যেসব ইবাদত করবেন তার পুরোটাই নফল। এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, নামাজ সব নফল। কোনোটাই ফরজ, ওয়াজিব বা অন্ততপক্ষে সুন্নতে মুয়াক্কাদাও না।
এজন্য কেউ এ রাতে নফল নামাজ পড়লে তা অন্যান্য যেকোনো সময়ের নফল নামাজের মতো পড়বে, নফল নামাজে সানা, সূরা ফাতিহা, সূরা মিলানো, বৈঠক, তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা, সব স্বাভাবিক নিয়মে পালন করতে হবে।
নামাজ শেষে চাইলে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে পারেন। তবে এ রাতের নফল নামাজের জন্য নির্দিষ্ট করে আলাদা কোনো দোয়া নেই। তাই শবে বরাতে কারো জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া করা উচিত হবে। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে কোরআন-হাদিসের ওপর সঠিকভাবে আমল করার এবং বিদয়াত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। (আমিন)।
তবে হাদিসে এসেছে- ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে বান্দার কোনো দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। আর তা হলো-
১. জুমআর রাতের দোয়া
২. রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া
৩. নিসফা শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাতের দোয়া
৪. ঈদুল ফিতর তথা রোজার ঈদের রাতের দোয়া
৫. ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের রাতের দোয়া।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)
তাই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে নিচের দোয়াটি বেশি বেশি পড়তে পারেন-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিক লি রিজকি। (নাসাঈ)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিজিকে বরকত দিয়ে দাও।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সব সময় বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। আমিন!
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: