শবে বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য

এস আলী দুর্জয় | ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১২:৪৬

শবে বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য

সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য শাবান মাস হচ্ছে সিয়াম সাধনার প্রস্তুতির মাস। আর লাইলাতুল বার’আত হচ্ছে এই শাবান মাসেরই একটি ফজিলতপূর্ণ রাত। লাইলাতুল বারাআত আরবি শব্দ, ফারসিতে বলা হয় — ‘ শবেবরাত ’ ।

‘ শব ’ অর্থ রাত, ‘ বরাত ’ অর্থ ভাগ্য, সেই হিসেবে ‘ শবেবরাতের ’ আভিধানিক অর্থ ভাগ্যরজনী । এই রাতকে মুক্তির রাতও বলা হয় । কারণ এই রাতে মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের প্রার্থনা কবুল করেন । গুনাহ মার্জনা করেন ।

 

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘ হা মীম! শপথ! স্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয় । ’- সূরা দুখান ১- ৩

কোরআনের ব্যাখ্যাকারগণ বলেন, আয়াতে ‘ লাইলাতুম মোবারাকা ’ বা বরকতময় রাত বলে শাবান মাসের পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে ।- তাফসিরে মাজহারি, রূহুল মাআনি ও রূহুল বায়ান ।

অন্যদিকে শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীস রয়েছে । হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে (শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৬৬৫) ।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত- বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব । এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৮৪) ।

এই রাত ফজিলতপূর্ণ হলেও এতে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত ও আমল নেই। তবে বিশেষ কিছু আমল করা যায়। সেটা হতে পারে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, নফল নামাজ, দোয়া- দরুদ, তওবা- ইস্তেগফার, দান- সদকা, উমরি ক্বাজা নামাজ, কবর জিয়ারত ইত্যাদি । তবে দলবদ্ধ ছাড়া একাকীভাবে কবর জিয়ারত করা যেতে পারে। কারণ বিশুদ্ধ মতানুসারে শবে বরাত ও শবে কদরের নফল আমলগুলো একাকী করণীয়। রাসূল (সা.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন । ’আয়েশা সিদ্দিকাকে (রা.) নিদ্রা থেকে জাগ্রত করেননি ।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে হজরত রাসূল (সা.) কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম । খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম । তিনি বললেন, কী ব্যাপার আয়েশা? তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোনো অবিচার করবেন? হজরত আয়েশা (রা.) বললেন আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল (সা.) তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত আসে, তখন আল্লাহতায়ালা এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন । তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানে তিরমিজি ৭৩৯) ।

কাজেই এই রাতে সৌভাগ্য অন্বেষণ এবং দ্বীন- দুনিয়া দুই জাহানের মুক্তির জন্য পরম করুণাময়ের দরবারে ইবাদত- বন্দেগি শেষে অতি বিনয়ের সঙ্গে প্রার্থনা করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হওয়া উচিত ।

লেখক : সদস্য , তরুন কলাম লেখক ফোরাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: