শাপলা চত্বরের তাণ্ডব: হেফাজতকে টাকা দিয়েছিলেন বিএনপির মিন্টু

সময় ট্রিবিউন | ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৫:১৬

ফাইল ছবি

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে জোট বেঁধে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম এবং বিএনপি। সরকার উৎখাতকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হয় পরিকল্পনা। হেফাজতের শাপলা চত্বরের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার বাসা ও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে দুটি বৈঠক করেছিলেন বিএনপি ও জামাতের কয়েকজন নেতা। ওই দুই বৈঠকে হেফাজত নেতাদের টাকা দেয়া হয়। এ অর্থের মূল যোগানদার ছিলেন ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টু। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী, হেফাজতের ১৩ দফা দাবি নিয়ে শাপলা চত্বরে তাণ্ডব চালানো হয়।

হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুফতি ফখরুল ইসলামকে গত ১৪ এপ্রিল লালবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ ও পুলিশের বিশদ তদন্তে এসব তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। রোববার ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে জানান।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির আগে কয়েক দফা বৈঠক হয় হেফাজত ও বিএনপি নেতাদের। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও এক জামায়াত নেতার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক হয়েছিল। খোকার বাসা ও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অফিসে ওই বৈঠক হয়।

“ওই দুই বৈঠকে হেফাজত নেতাদের আন্দোলন পরিচালনার জন্য টাকা দেয়া হয়। সেই টাকার একটি বড় অংশ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি কয়েক কোটি টাকা দেন।”

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম আরো জানান, ‘মূলধারার যেসব রাজনৈতিক দল হেফাজতের সঙ্গে আছে, যেমন বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী– তাদের সঙ্গে যোগসাজশ আমরা পেয়েছি। ২০১৩ সালের ষড়যন্ত্রে বিএনপির কয়েকজন নেতার যোগসাজশ প্রমাণিত।’

সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে হেফাজতের যে তাণ্ডব, তার পেছনে এ দলগুলোর একই রকম আঁতাত আছে বলে মন্তব্য করে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পরিকল্পনা হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সমসাময়িক কোনো বৈঠকে হয়েছে, নাকি আগের ২০১৩ সালের মিটিংয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছে, সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের বাইরে থেকে তাদের কাছে ফান্ড আসে। কোন কোন দেশ থেকে তাদের এই অর্থ আসে, কারা পাঠান– এগুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। সেই সঙ্গে লন্ডন ও কানাডা থেকে সম্প্রতি কোনো ফান্ড এসেছে কিনা, সেটাও যাচাই করা হচ্ছে।’

যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, ৫ মের ঘটনার আগে আগে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ অনেকের সঙ্গে হেফাজতের তখনকার মহাসচিব (বর্তমানে আমির) জুনায়েদ বাবুনগরীর বৈঠক হয়েছিল। সেসব বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শাপলা চত্বরে তাণ্ডব স্থায়ী হলে বিএনপি-জামায়াত তাতে যোগ দেবে।

মুফতি ফখরুল জবানবন্দিতে যা বলেছেন

হেফাজত নেতা মুফতি ফখরুল ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের এসব তথ্য দেন তিনি। রিমান্ড শেষে গত ১৯ এপ্রিল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ফখরুল।

জবানবন্দিতে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মের সহিংসতার বিষয়ে বলেন, ওইদিন তিনি কারাঙ্গীরচর মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার ৮-১০ হাজার হেফাজত কর্মী-সমর্থক নিয়ে লালবাগ-চকবাজার হয়ে নয়াবাজারে আসেন। জোহরের নামাজের পর দুপুর ২টার দিকে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেব ফোন দিয়ে সবাইকে নিয়ে শাপলা চত্বরে যাওয়ার জন্য বলেন।

শাপলা চত্বরে যাওয়ার সময় গোলাপশাহ মাজারের সামনে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়েন। সেখানে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর ৩টার দিকে শাপলা চত্বরে পৌঁছান। শাপলা চত্বরে গিয়ে তিনি মাওলানা আব্দুল্লাহ রব ইউসুফি, জুনায়েদ আল হাবিব, মামুনুল হক, মাওলানা জাফর উল্লাহসহ অন্যান্য নেতাদের দেখতে পান। মামুনুল হকসহ অন্যান্য হেফাজত নেতারা তাদের ১৩ দফা দাবি আদায় না করতে পারলে সরকার পতনের আন্দোলন করা হবে বলে তাকে জানিয়েছিলেন।

মুফতি ফখরুল তার জবানবন্দিতে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য দেন। তিনি বলেন, আন্দোলন পরিচালনা করতে বিএনপির দুই জন ও জামায়াতের একজন নেতা হেফাজতকে অর্থ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া, আন্দোলনের এক সপ্তাহ আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জুনায়েদ বাবুনগরীর বৈঠক হয়েছিল বলে মুফতি ফখরুল। আর এসব তথ্য তিনি জেনেছিলেন হেফাজত ও ইসলামি ঐক্যজোটের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহীর কাছ থেকে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: