ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানে উপজেলা বিএনপি এক নেতার নাম প্যানেলভুক্ত করার সুপারিশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে দলীয় মনোনয়ন দিতে বিএনপি নেতা আহজারুল হকের নাম প্যানেলভুক্ত করে কেন্দ্রে পাঠানোর এ অভিযোগ দলীয় কার্যালয় গ্রহণ করেছে।
এ ঘটনায় গত ৬ অক্টোবর স্থানীয় গোয়ালনগর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কিরণ মিয়া সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার কিরণ মিয়া লিখিত অভিযোগ গ্রহণের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তার সই করা অভিযোগপত্রে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সাবেক কমিটির সদস্য আজহারুল হকের নাম বাতিল ও তাকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
কিরণ মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, 'অভিযোগপত্রের সঙ্গে উপজেলা বিএনপি-জামায়াত আহবায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা, বিএনপি-জামায়াত নেতাসহ সংযুক্ত ছবি ও মনোনয়ন প্যানেল তালিকা সংযুক্ত করে দিয়েছি।'
অভিযোগে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর উপজেলা ডাক বাংলোতে উপজেলা কার্যকরী পরিষদ ও প্রত্যেক ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী সভার আহবান করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১) বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। পরদিন ১ অক্টোবর বিকেল ৩টায় গোয়ালনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ইউনিয়নের সব ওয়ার্ড শাখা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপি নেতা ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল হককে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু, গত ২ অক্টোবর বিএনপি নেতা আজহারুল ২০ হাজার টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে যান। সে সময় ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম ওই বিএনপি নেতার নাম আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন তালিকায় প্যানেলভুক্ত করতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাছে জোর সুপারিশ করেন। আজহারুল হকের নাম তালিকার প্রথমে রাখার সুপারিশও করেন তিনি।
সে সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা এর বিরোধিতা করলেও, সংসদ সদস্য নিজে আজহারুলের নাম এক নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করেন।
আসন্ন নির্বাচনে গোয়ালনগর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কিরণ মিয়া বলেন, 'সংসদ সদস্যের নগ্ন হস্তক্ষেপে তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত আজহারুল হকের নাম এক নম্বরে তালিকাভুক্ত করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাকে মনোনয়ন না দিতে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।'
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, 'প্রত্যেক ইউনিয়নের সিটিং চেয়ারম্যানদের নাম তালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে। কারো নাম তালিকার এক নম্বরে রাখা হলেই যে তিনি মনোনয়ন পেয়ে যাবেন বিষয়টি এমন নয়। যার যার আমলনামা অনুযায়ী এটা হবে। তালিকায় নামের পাশে মন্তব্যের কলাম ছিল, সেখানে সবার আমলনামা লেখা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'মনোনয়ন দেওয়া না দেওয়া দলীয় নেত্রীর বিষয়। ৫ জনের প্যানেলে যার নাম আসবে, সে-ই আমার।'
বিএনপি নেতাকে মনোনয়নের সুপারিশ কেন করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, 'সে বিএনপি কি না আমি জানি না। বিগত ইউপি নির্বাচনে সে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে। প্রত্যেক ইউনিয়নেই সিটিং চেয়ারম্যানের নাম এক নম্বরে দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে তার নামও দেওয়া হয়েছে।'
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: