এমপি লীগের বিরুদ্ধে শুরু হচ্ছে অভিযান

সময় ট্রিবিউন | ১৬ জুলাই ২০২১, ১৮:২৮

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম পথ ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের এমপি নূর মোহাম্মদ-ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এমপি লীগের লড়াই চলছে। বিভিন্ন জায়গায় নব্য আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠা এমপিরা আওয়ামী লীগের বিকল্প একটি আওয়ামী লীগ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন জেলায় এবং নির্বাচনী এলাকায় এখন দুইটি আওয়ামী লীগ দৃশ্যমান। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে নিজ দল আওয়ামী লীগে চলছে শুদ্ধি অভিযান। ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যায়কারী, দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় দেবেন না তিনি। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমন্বয়ে দলকে নতুন করে উজ্জীবিত করতে দল থেকে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে হাইব্রিড মুক্ত করার প্রচেষ্টায় আছেন শেখ হাসিনা। তারই প্রতিফলন ঘটালেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম পথ। তিনি গঠনতন্ত্র বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় গঠিত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত ৯ জুলাই কিশোরগঞ্জ-২ আসনের এমপি নূর মোহাম্মদকে দেয়া হয়েছে। এই চিঠিতে এটাও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠনতন্ত্র বহির্ভূত প্রক্রিয়ার গঠিত পাকুন্দিয়া উপজেলার ইউনিয়ন কমিটিসমূহ বিলুপ্ত করা হলো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মির্জা আজম যে পথ দেখিয়েছেন সেই পথে বহু কমিটি বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকরা।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এমপি লীগের লড়াই চলছে। বিভিন্ন জায়গায় নব্য আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠা এমপিরা আওয়ামী লীগের বিকল্প একটি আওয়ামী লীগ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন জেলায় এবং নির্বাচনী এলাকায় এখন দুইটি আওয়ামী লীগ দৃশ্যমান। একটি আওয়ামী লীগ যারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের জন্য নিপীড়িত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। অন্য একটি গ্রুপ হলো ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ হওয়া। যারা এমপি হয়েছেন হয় টাকার জোরে না হলে ব্যবসায়িক কারণে। তাদেরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের অতিথি পাখি। এই অতিথি পাখিরা যখন এমপি হয়েছেন তখন এলাকায় তারা আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব মেনে নিতে রাজি হচ্ছেন না। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পুরনো কর্মীরা তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ কারণেই তারা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে একটি বিকল্প কমিটি গঠন করার চেষ্টা করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছেন। আর এই সমস্ত কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে এমন সব ব্যক্তিদের নিয়ে যারা কোনদিন আওয়ামী লীগ করেননি। এমনকি কেউ কেউ বিএনপি-জামায়াত করেছেন এরকম ব্যক্তিদেরকে এমপিরা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নিয়েছেন এবং সেই কমিটিকে দিয়েই তিনি তার প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের চেষ্টা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা চলছে। এমপি লীগের বিরুদ্ধে কথা বলছেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে এমপি লীগের দৌরাত্ম্য আরো স্পষ্ট হয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল সেই মনোনয়নের বিরোধিতা করে অনেক এমপিই তার পছন্দের ব্যক্তিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। যদিও সেই সময় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে নৌকার বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন তাদেরকে ভবিষ্যতে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে না এবং তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু প্রভাবশালী কিছু এমপি`র চাপে সেই সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হয়নি। যার ফলে তৃণমূল পর্যায়ে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। একদিকে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আর অন্যদিকে উড়ে এসে জুড়ে বসা এমপির মদদপুষ্ট সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগের দৌরাত্ম্য এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করা বা দুইয়ের মধ্যে সত্যিকারের আওয়ামী লীগদেরকে পাদপ্রদীপে আনাটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই ক্ষেত্রে মির্জা আজম পথ দেখিয়েন।

মির্জা আজম গত কিছুদিন ধরেই দলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কথা বলছেন। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক কর্মী সমাবেশে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, দলের কিছু নেতা টাকা খেয়ে অনুপ্রবেশকারীদেরকে কমিটিতে দেয়, পদ বাণিজ্য করে। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন। তার এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ওইখানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীরা। সেই ধারায় তিনি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ইউনিয়ন কমিটিসমূহ বিলুপ্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের অস্বস্তির কিছুটা হলেও অবসান করলেন। এখন মির্জা আজমের পথ ধরে অন্যরাও যদি এরকম নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা কমিটিগুলোকে বিলুপ্ত করে তাহলে সেটিই হবে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় গঠিত সব কমিটি বাতিল করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সাথে তিনি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: