সরকার ‘পাকিস্তানি বাহিনী’র মতো জনগণের সব অধিকার খর্ব করছে: ফখরুল

সময় ট্রিবিউন | ২৬ জুন ২০২১, ০৬:৪৪

ফাইল ছবি

বর্তমান সরকার ‘পাকিস্তানি বাহিনী’র মতো জনগণের সব অধিকারগুলো খর্ব করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, 'আজকে যারা ক্ষমতায় বসে আছেন জোর করে ক্ষমতা দখল করে একটা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর মতোই মানুষের সমস্ত অধিকারগুলোকে খর্ব করছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে চেতনা ছিলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা তাকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভুলণ্ঠিত করে দিয়ে একটা এক দলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা আজকে মানুষের ওপর অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে'।

তিনি বলেন, 'আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপি সবসময় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, রণাঙ্গনে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের সংগঠিত দল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছিলো, যুদ্ধ করেছিল, সেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য বিএনপি সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের সেই সংগ্রাম ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সফল হবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন এবং গণতন্ত্র মুক্তি পাবে'।

স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা সরকারকে দেখতে পাই, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার সত্য ইতিহাস বিকৃত করে তারা তাদের তৈরি করা ইতিহাস আজকে জাতির সামনে, পরবর্তী প্রজন্মের সামনে নিয়ে আসছে। আজকে দলের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যেসব অনুষ্ঠান করা হচ্ছে এটার লক্ষ্যই হচ্ছে প্রকৃতি ইতিহাসগুলো সামনে তু্লে নিয়ে আসা। এটা কারো প্রতি বিরাগ নয়, কারো ছোট করা নয়, বরং যার যে সন্মান সেই সন্মানগুলো তাদের দেওয়ার জন্য। সত্যিকার অর্থেই যারা মুক্তিযুদ্ধে সেদিন অবদান রেখেছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে করেছিলেন আজকে তারা সবাই উপেক্ষিত'।

তিনি বলেন, 'এদের (আওয়ামী লীগ) ঘটনাবলী দেখলে মনে হয় যে, এদেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ কেউ করে নাই একমাত্র একজন ব্যক্তি ছাড়া। অথচ তিনি সেই দিন দেশেই ছিলেন না, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। আওয়ামী লীগের এই সরকার আজকে একবারের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী সাহেবের নাম উচ্চারণ করেন না, তারা সেই সময়ে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেবের অবদানের কথা একবারের জন্য বলেন না, লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা যারা সাধারণ মানুষ থেকে এসছিলো, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো তাদের কথা তারা উচ্চারণ করেন না'। ফখরুল বলেন, 'আর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দি্য়েছিলেন তাকে তারা খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য যত রকমের বিকৃত ইতিহাস আছে তার সেটার একটা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে'।

জিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঐকবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আজকে সেই ক্যাম্পেইনকে প্রতিরোধ করবার জন্য, সেই প্রচারকে বন্ধ করার জন্য এবং নতুন প্রজন্মকে সত্য ইতিহাস তুলে ধরবার জন্যে আমাদেরকে সেভাবে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে হবে'।

বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তা উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফ্লাইট লেফট্যান্টে মতিউর রহমান বীরশ্রষ্ঠ'র দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

স্বাধীনতা সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর পাকিস্তানে ছিলো। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেই সময়ে তার করবের দেহাবশেষ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে শহীদ ‍বুদ্ধিজীবী কবরাস্থানে পুনরায় সমাহিত করা হয়। এই কাজটি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সফলভাবে করতে পেরেছিলেন বলে আজকে বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে দেশের মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরাস্থানে গিয়ে সন্মান জানাতে পারে'।

তিনি বলন, 'এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কী পরিমান শ্রদ্ধাশীল। এই কারণে শ্রদ্ধাশীল যে, এই দল মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের প্রতিষ্ঠিত দল। আজকের এদিনে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে এসে পুনরায় সমাহিত করা হয়েছিল বলেই এদিন বিএনপি শ্রদ্ধার সাথে পালন করছে'।

স্বাধীনতা সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান বক্তব্য রাখেন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: