বজ্রপাত ঠেকাতে তালগাছ রোপন করবে আওয়ামী লীগ

সময় ট্রিবিউন | ২৪ জুন ২০২১, ০২:২৬

সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এবার তিন জেলায় সাত হাজার দুইশত তাল গাছের চারা রোপনের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতারা বলছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন থেকেই পর্যায়ক্রমে কেরানিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তালের চারা রোপণ করবেন তারা।

আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, "বজ্রপাত প্রতিরোধে বড় গাছ দরকার, এর মধ্যে একটা হলো তাল গাছ। এতে অপেক্ষাকৃত বেশি বজ্র আঘাত করে। পরিবেশ বিজ্ঞাণীরা বলছেন, এ গাছগুলো যদি আমরা রোপন করি, তাহলে ১০-১৫ বছর পর সুফল পাবো। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বজ্রপাতের প্রভাব কমাতে অন্য উচু গাছের সাথে এবার তাল গাছ যুক্ত করলাম।

"আমরা ৭২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বন ও পরিবেশ উপকমিটির পক্ষ থেকে দেশের দু তিনটি জেলা চিহ্নিত করেছি যেখানে বজ্রপাত বেশি। সেই জেলাগুলোতে রোপনের মধ্য দিয়ে মানুষকে সচেতন করতে এবং উদ্বুদ্ধ করতে তাল গাছ রোপন করবো।"

দেশে সবুজায়ণ বৃদ্ধি করতে গত কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। মুজিবর্ষ উপলক্ষে গত বছর ও এ বছর মিলিয়ে সারাদেশে তিন কোটি গাছের চারা রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে গত বছর প্রায় এক কোটি চারা রোপন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের এই নেতা।

তালের চারা সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বলেও জানান দেলোয়ার।
তিনি বলেন, ‘‘তালের চারা পাওয়াটা কঠিন। কোনো নার্সারি বা বন বিভাগে কেউই এই চারা করে না।

"এ কারনে চারার প্রকট অভাব রয়েছে। আঁটি পাওয়া যায়। আমরা পাঁচ থেকে সাত হাজার তালের চারা সংগ্রহ করেছি।"
বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক প্রাণহানি বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসেব বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে বজ্রপাতে প্রায় তিন হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

২০১১ সালের পর থেকে বজ্রপাতের পরিমাণও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। বজ্রপাতে ২০১৫ সালে ৯৯ জন, ২০১৬ সালে ৩৫১ জন ও ২০১৭ সালে ২৬২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু ও চার শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার বলেন, ‘‘আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা, এটি যে নতুন কোনো সমস্যা তা নয়, তবে এটি এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সেটি হলো বজ্রপাত। এটি আগেও ছিলো এখনও আছে। তবে আগে প্রাণহানি কম ছিলো এখন বেশি।

"বনভূমি আগে বেশি থাকায় সেখানেই বজ্র পড়তো, লোকালয়ে তেমন একটা পড়তো না। আবহাওয়া ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে আমাদের দেশে আরো বেশি। এগুলো বেশিরভাগ সময় উচু বৃক্ষে আঘাত হানে। ক্ষয়ক্ষতি গাছের উপর দিয়েই যেতো। আমরা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করেছি যার ফলে এটি ভূমিতে পড়ছে। এতে মানুষ বা প্রাণী ক্ষতির মুখে পড়ছে।"

তিনি বলেন, "কেরানিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ আমরা নির্ধারন করেছি। আপাতত এই তিন জেলা দিয়ে শুরু করছি। পরবর্তীতে তালের চারা পাওয়া সাপেক্ষে আমরা অন্য জেলাগুলোতেও রোপন করবো।

"আমরা অন্যদেরও আহ্বান করবো সম্ভব হলে তাল গাছ আর না হলে অন্য বড় যে গাছগুলো রয়েছে সেগুলো রোপন করুন।"

চারা রোপনের পর এগুলোর পরিচর্যার দায়িত্ব স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

দেলোয়ার বলেন, "গাছ রোপন করলেই হবে না এগুলোকে পরিচর্যার ব্যাপার আছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যেহতু একটি বড় দল। অনেক নেতাকর্মী রয়েছে। আমরা স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এগুলো রোপন করবো।

"পাশপাশি সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করবো। এগুলো আমরা বিনামূল্যে মানুষকে বিতরণ করবো। উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সচেতন করা।"



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: