বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশে আনা হবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদের মরদেহ। দেশে এনে মরদেহ রাখা হবে ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে। পরদিন শুক্রবার জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের মানিকপুর গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে তাকে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার (২০ মার্চ) জাতীয় সংসদে তার জানাজার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে সেখানে প্রথম জানাজা হবে। এরপর দ্বিতীয় জানাজা হবে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখান থেকে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে শেষ জানাজা হবে। তারপর মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ইচ্ছা ছিল গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের মানিকপুরে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে যেন সমাহিত করা হয়। তিনি তার কবরের জায়গা ঠিক করে রেখেছিলেন আগেই।
বাংলাদেশে সময় আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মওদুদ আহমদ। গত ১ ফেব্রুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য মওদুদ আহমদ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। ফুসফুসে পানি জমার কারণে অবস্থার অবনতি হলে গত ৯ মার্চ তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে সম্মান পাস করে ব্রিটেনের লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশোনা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত ছিলেন।
১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহূত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন। ১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী-৬ আসন) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেবার তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬-তে তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন।
৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাঁচবার মওদুদ আহমদ নোয়াখালী-৫ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: