বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশের দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

সময় ট্রিবিউন | ৯ জুন ২০২১, ২৩:৪০

কানাডার বেগমপাড়াসহ বিদেশে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা জাতির সামনে দ্রুত প্রকাশের দাবিতে বুধবার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ-ছবি: সংগৃহীত

কানাডার বেগমপাড়াসহ বিদেশে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা জাতির সামনে দ্রুত প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

বুধবার (৯ জুন) দুপুর ১২ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে সংগঠনটি।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

সমাবেশের সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম-অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায় দেশের অর্থ বিদেশে পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা জাতির সামনে দ্রুত প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজরা দেশ ও জাতির শত্রু। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের পিতারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে বাংলাদেশ। কিন্তু আজও পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচার সম্পূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড। আমরা কখনোই এসব দুর্নীতিবাজদের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড মেনে নিবো না।’

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও দুদকের দায়িত্ব হচ্ছে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে সেই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে কখনোই বিদেশে অর্থ পাচার হতো না এবং অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো বলে আমরা মনে করি’।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাটোরের সাংসদ শিমুলের বিরুদ্ধে কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগ ওঠেছে। কিছুদিন আগে সংসদ সদস্য পদ হারানো পাপুলের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠেছে। পিকে হাওলাদারসহ অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। কিন্তু কানাডার বেগমপাড়ায় যারা অর্থ পাচার করে বাড়ি কিনেছে, তাদের নাম এখনোও পর্যন্ত জাতির সামনে প্রকাশ করা হয়নি যা জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এই নেতা বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই গত নভেম্বরে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের যে গুঞ্জন আছে, তার কিছুটা সত্যতা আমরা পেয়েছি। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী টাকা পাচারের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যাই বেশি। টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া ২৮টি ঘটনার মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি। প্রাথমিকভাবে কিছু সত্যতা পেয়েছি। মনে করেছিলাম রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু দেখা গেল, রাজনীতিবিদ চারজন। সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ী আছেন।” সুতরাং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী সেই ২৮ জন বিদেশে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা জাতির সামনে অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।’

আল মামুন আরোও বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকা বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল তথ্য জাতির সামনে দ্রুত প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। কেউ আইনের উর্ধে নয়। আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী যারাই অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। জনগণের টাকা যারা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে।’

আরোও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন স্বাধীন, সহ-সভাপতি রোমান হোসাইন, শাহীন মাতবর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি আরিফুর রহমান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক শেখ মাসুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের কোন ঠাঁই হবে না। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কানাডার বেগমপাড়াসহ বিদেশে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজরা এখন নব্য রাজাকারে পরিণত হয়েছে। এরা দেশ ও জাতির প্রকৃত শত্রু। বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। বর্তমান সরকারের সফল অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। বিদেশে অর্থ পাচারকারীরা বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের মূলহোতা। এরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, “কারা অর্থ পাচার করে, সেই তালিকা আমার কাছে নেই। নামগুলো যদি আপনারা জানেন যে এঁরা এঁরা অর্থ পাচার করেন, আমাদের দিন।” অর্থমন্ত্রীর এধরনের দায়িত্বহীন বক্তব্য আমাদেরকে হতাশ করেছে।’

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রায় এক ঘন্টা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করার পর সংগঠনের তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ওয়ারিসুল ইসলাম। স্মারকলিপি হস্তান্তরের সময় প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ভাস্কর শিল্পী রাশা, সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: