পাকুন্দিয়া-কটিয়াদি : দলীয় কর্মসূচি পালনেও বাঁধা দেয় এমপি লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি | ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০২:০৭

ছবি-সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদি উপজেলা দুইটি নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ (সংসদীয় আসন ১৬৩) আসনটি গঠিত। একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ়। ২০০১ সালের চার দলীয় জোট সরকারের সময় থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগ পেয়ে আসছে। তবে এ অঞ্চলে অতীতে আওয়ামী লীগের ভেতর সম্প্রীতি থাকলেও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এ আসনের রাজনীতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। দলীয় কোন্দলের জেরে এ অঞ্চলে প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ, বাড়ি-ঘর ভাংচুর, দলীয় কর্মসূচি পালনে বাঁধা এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

স্থানীয়রা দাবি করেছেন, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সাবেক আইজিপি(পুলিশ মহাপরিদর্শক), সচিব ও রাষ্ট্রদূত নূর মোহাম্মদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ, দলীয় কর্মসূচি পালনে বাঁধাদানসহ বিভিন্ন ব্যাপারে সময় ট্রিবিউন- এর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

২৩ জুন, ২০২২

২০২২ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত আনন্দ মিছিলে আক্রমণ চালায় নূর মোহাম্মদ এমপির সমর্থকরা। এতে প্রায় ৫০ জন দলীয় নেতাকর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে আহত নেতাকর্মীদের উপর হাসপাতালেও হামলা চালায় এমপির মদদপুষ্টরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আহতদের মামলা না নিয়ে উলটো উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বাড়িঘর ভাংচুর ও লোটপাটের মামলা দায়ের করে। পুলিশের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ সেসময় এলাকায় বেশ সমালোচনার জন্ম দেয়।

২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল আনুমানিক ১০ টায় পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দীন নেতা কর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে রওনা দেন। পথে থানা মোড় এলাকায় পুলিশ তাদের শোভাযাত্রায় বাঁধা প্রদান করে। পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে সোহরাবের নেতৃত্বে নেতা কর্মীরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে সাংসদ নূর মোহাম্মদের সমর্থকেরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে প্রায় ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। 

নূর মোহাম্মদের সমর্থকদের হামলায় আহত

১৬ ডিসেম্বর, ২০২১

২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিনা উষ্কানীতে সংঘর্ষে জড়ায় বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন জানায়, সকালে নূর মোহাম্মদ এমপি ফুল দিয়ে চলে যান। তারপর ফুল দিতে আসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিন। সে সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা নূর মোহাম্মদ এমপির সমর্থকদের সাথে সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের বাক-বিতণ্ডা হয়। তারপর বেঁধে যায় সংঘর্ষ। ফুল দিতে বাঁধা দেওয়া হয় সোহরাব উদ্দিনকে। উক্ত সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন নেতা কর্মী আহত হন। পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ থেকে একপাক্ষিক মামলা দায়ের করা হয়।

২৬ মার্চ, ২০২২

২০২২ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ শ্রদ্ধা জানাতে গেলে দেখানেও বাঁধা দেয় বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা। এতে সংঘর্ষ বাঁধলে পুলিশ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। অভিযোগ ওঠে নূর মোহাম্মদ এমপি ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বেআইনীভাবে পুলিশ ফর্সকে ব্যবহার করছেন।

২১ মে, ২০২২ 

২০২২ সালের ২১ মে পাকুন্দিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে বাঁধাগ্রস্থ করে নূর মোহাম্মদ এমপির সমর্থকরা। সম্মেলনের স্থান এবং তারিখ পুর্ব নির্ধারিত হলেও সেই স্থানে এমপির অনুসারীরা ফুটবল খেলার আয়োজন করে যা এলাকার সাধারণ জনগণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর বলে অভিহিত করে। সেদিন সম্মেলন স্থলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় তবে পুলিশ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন আহত এবং গ্রেফতার হন।

হামলায় আহত

এসব বিষয়ে কটিয়াদি উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা জানান, কটিয়াদি এবং পাকুন্দিয়ার জনগণ এমপি লীগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তারা এমন দুঃশাসন অতীতে কখনও দেখেননি। বিএনপি, জামাত আর জাতীয় পার্টি থেকে ভাড়া করে লোক এনে তিনি এ অঞ্চল শাসন করতে চান। এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এমন নেতৃত্বের হাত থেকে বাঁচতে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাচ্ছে প্রতিদিন।

পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি ফরিদ উদ্দিন বলেন, নূর মোহাম্মদের পালিত সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে রক্তাক্ত করেছে। দাঁত ভেঙে ফেলেছে অনেকগুলো। হাতে গুণা চিহ্নিত কিছু গুন্ডা সারা উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বর্তমান সাংসদের এমন অন্যায়-অনিয়ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত রয়েছে। তারা এবার যোগ্য লোককে মনোনয়ন দিয়ে এমন অন্ধকার থেকে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের জনগণকে মুক্তি দিবেন বলে বিশ্বাস রাখি।

বিভিন্ন ঘটনায় অভিযোগের বিষয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ এমপিকে সময় ট্রিবিউন থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কলটি রিসিভ করেননি।

পর্ব-২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: