নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমান।
সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন করেন নারায়ণগঞ্জ–৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। তবে এই সংবাদ সম্মেলনকে ‘জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সংবাদ সম্মেলন’ বলেও অভিহিত করেছেন শামীম ওসমান।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘নৌকার জন্য যেভাবে নামা উচিত আমার, সেভাবে নামতে পারিনি। তবে আজকে থেকে ইনশা আল্লাহ সেভাবে নামলাম।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকারকে হুঁশিয়ারি করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আপনি আপনার মতো কথা বলেন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই। হাতি দিয়া নৌকা ডুবাই দিবেন— আমার মনে হয় না নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামাতের ওই ক্ষমতা আছে যে নৌকা ডুবাই দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এইটা আমি বিশ্বাস করি না। হাতির বড়জোড় সাইজ বড় হতে পারে, হাতির সাইজ বড় হইলে আমরা কান্ধে নিয়ে দৌড় দিব ইনশা আল্লাহ। কিন্তু নৌকার ওপর উঠতে দিব না।’
সিটি নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চাননি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, ‘কিন্তু আমার চুপ থাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে এবং আমার দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। কেউ দলের উল্টো দিকে থেকে ক্ষতি করছে, কেউ দলের সাথে হেঁটে ক্ষতি করছে।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘গরীবের বউ যেমন সবার ভাবি হয়, আমার অবস্থা হয়েছে এই। এ–ও বলে আমি ওনার, উনিও বলে আমি ওনার। দুজন দুজনকে দিয়ে দিতে চায়, কী একটা পজিশনে আমি পড়েছি, আমি জানি না।’
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শামীম-আইভীর দ্বন্দ্ব পুরোনো। ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনে শামীম ওসমান আইভীর কাছে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে একে অপরকে আক্রমণ করে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিয়ে থাকেন।
সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আইভী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর এই সাংসদের বিরুদ্ধে তৈমুর আলম খন্দকারকে প্রার্থী হওয়ার পেছনে ও সমর্থন দেওয়ার গুঞ্জন উঠতে থাকে। ওই গুঞ্জনের মধ্যে গত শুক্রবার তৈমুরের গণসংযোগে জাপা দলীয় সাংসদ তাঁর ভাই সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ চার ইউপি চেয়ারম্যান অংশ নেন। পরদিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী অভিযোগ করেন, তৈমুর গডফাদার শামীম ওসমানের প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম উল্লেখ না করে সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, ‘কে প্রার্থী, হু কেয়ার। কলাগাছ না আমগাছ, সেটা দেখার বিষয় না। আমাদের দেখার বিষয় একটাই, এইটা আমার স্বাধীনতার নৌকা, এইটা আমার জাতির পিতার নৌকা, এইটা আমার শেখ হাসিনার নৌকা, এইটা আমার বঙ্গবন্ধু পরিবারের নৌকা, এইটা আমাদের রক্ত দিয়ে গড়া নৌকা…। এই নৌকার বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।’
অনেক কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে কষ্টের একটা সংবাদ সম্মেলন করলাম।’ আইভীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘একজনের কাছে অনুরোধ করব, অন্ততপক্ষে আল্লাহর কাছে মাফ চান। তাহলে একটু শান্তি পাই। কারণ, শয়তানে শয়তানি করতে পারে। মানুষের সেটা করা উচিত না। আমি তো মানুষ। আমি তো রোবট না।’ সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে ‘কবরস্থানে শ্মশানের মাটি’ ফেলার ইস্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
শামীম ওসমান বলেন, ‘মিছিলে, মিটিংয়ে, পোস্টারে ভোট আসে না। ভোট আসতে মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষের ঘরে যেতে হবে। আমি মানুষের জন্য কী করব, সেইটা বলতে হবে। অপরকে দোষারোপ করে নিজে ভোট পাওয়া যায় না।’
সাংসদ হওয়ায় নির্বাচনী আচরণবিধির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি এখন এখানে বসে নির্বাচনে ওমুককে ভোট দিন বলি, সেটা আমার জন্য সঠিক হবে না।’ রাগ–অভিমান ভুলে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
চাপে পড়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান নিজের মুঠোফোনে থাকা তাঁর ছেলের পাঠানো একটি ইংরেজি উক্তি পড়ে শোনান। এরপর বলেন, ‘আমি নিজেই ঝড়। কারও কোনো চাপ নাই। আর কারও চাপে মাথা নত করার মানুষ আমি না।’
‘গডফাদার’ বলার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারও যদি ইচ্ছে হয় আমাকে গডফাদার বলতে, তো বলবেন। দুই দিন আগে ইচ্ছে হয়েছে ফাদার বলতে, বলেছেন। তিন দিন আগে মনে হয়েছে ব্রাদার বলতে, বলেছেন। তবে যে যাই বলেন, গডমাদার বইলেন না। কারণ, আমি পুরুষ মানুষ। এসব গালি শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই এসবে আমি এখন ড্যাম কেয়ার।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আগামী ১৬ তারিখ খেলা হবে। খেলায় আমরাই জিতব।’
তৈমুরকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীর অভিযোগের বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘নির্বাচন করতে গেলে অনেক সময় মাথার স্ক্রু ঠিলা হয়ে যায়। উনি বলছেন সেটা ওনার বিষয়। আমি যদি তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতে যাই, তাহলে তাঁর নির্বাচনে ইফেক্ট (প্রভাব) ফেলবে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: