গেলো বছর পর পর তিনবার রোপা আউস ধান অতি বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় এবার সময়ের একটু আগেই আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, রায়পুর, কমল নগর, রামগতি ও চন্দ্রগঞ্জ ঘুরে বোরো আমন ধানের বাম্পার ফলন দেখা গেছে। জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চালসহ মেঘনা উপকূলে চলছে ধান কাটার উৎসব। মাড়াই, শুকানো ও সংরক্ষণে কৃষক পরিবারের ব্যস্ততা দেখা গেছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা মেঘনা উপকূলে হওয়ায় এখানকার মাটি ধান আবাদের জন্য উপযোগী। এ জেলার হাজার হাজার পরিবার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার বাড়ীসূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা বোরো আমন মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলায় ৭২ হাজার ৫৯৭ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জিত হয়েছে ৭৭ হাজার ৮৯০ হেক্টর।
এরমধ্যে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় উফশী জাতের ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ২ হাজার ১০০ হেক্টর, হাইব্রিড ৫০ হেক্টর। রায়পুরে হাইব্রিড এক হাজার হেক্টর, উফশী ৯ হাজার, স্থানীয় ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এছাড়া রামগঞ্জে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে উফশী ধানের আবাদ করে কৃষকরা। কমলনগরে উফশী ২২ হাজার হেক্টর, স্থানীয় জাতের ১ হাজার ৫০০ হেক্টর ও কমলনগরে ১৮ হাজর ২৬০ হেক্টরে উফশী এবং এক হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কলনগরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ মুরাদ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন-'গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ কমে উফশী জাতের আবাদ বেড়েছে।'
বেশি ফলন হওয়ায় কৃষকদের হাইব্রিড ও উফশীতে আগ্রহ। এসব ধানে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন, নিজাম হোসেন ও মুক্তার হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে বাড়ছে না কৃষকদের উৎপাদিত ধানের দাম। এভাবে চলতে থাকলে কৃষিতে আগ্রহ হারাবে কৃষক। চলতি মৌসুমে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য প্রত্যাশা করছেন তারা।
রামগতির কৃষক ছেরাজুল ইসলাম বলেন-'গত আউশ মৌসুমে একাধিকবার ধান রোপন করেও বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কাঙ্খিত দাম না পেলে কৃষকরা লোকসানে পড়বে।'
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেন এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন- 'ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পাশে আছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে আবাদ করায় কৃষকরা কাঙ্খিত ফসল পাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আশা করছি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ধানের ন্যায্য দামও পাবে।'
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: