আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের ছবি দিয়ে স্তুতি গাওয়া ও ছাত্রলীগের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোস্তাফা সারোয়ার মাহমুদ ভোল পাল্টিয়ে এখন বিএনপিপন্থী গ্রুপের কর্তা সেজেছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-সেনা অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও এখনো সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘কিং’ মোস্তাফা সারোয়ার।
বরং সাধারণ কর্মকর্তাদের বদলি কিংবা আওয়ামীলীগ ট্যাগ দিয়ে নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে আ’লীগ সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রীর আস্থাভজন এ কর্মকর্তার।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, উপপরিচালক (প্রশাসন) মোস্তাফা সারোয়ার মাহমুদ নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে ছড়ি ঘুরাতেন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের ওপরে।
যদিও তার সময়ের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিশ্চিত করেছে, তিনি ছাত্রলীগের কোন পদে ছিলেন না। তার পদ ব্যবহার করে এমন অপকর্মে বিস্মিত জাবি ছাত্রলীগের সাবেক একাধিক নেতা।
তিনি একইসাথে পরিচয় দিতেন তার বাবা আবদুল মোত্তালেব ছিলেন কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
যদিও এসব অস্বীকার করে মোস্তাফা সারোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘আমি কখনোই ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। বরং কসবা থেকে আমাকে জামায়াত-বিএনপির ট্যাগ দিয়ে বদলি করা হয়েছে।’
জিয়াউর রহমানকে ব্যঙ্গ করে কলাম লেখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওটা আমি ছাত্রাবস্থায় লিখেছি। তখন হয়তো আমার চিন্তার অপরিপক্বতা ছিল।’
এবারও বাবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ আর নিজের ছাত্রলীগের পরিচয় বহন করে টিকে যান স্বপদে।
জানা যায়, নুরুজ্জামান আহমেদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী থাকাকালে মোস্তাফা সারোয়ার মাহমুদ ছিলেন উপপরিচালক (বয়স্ক ভাতা)। মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের শেষদিকে দায়িত্ব পান উপপরিচালক (প্রশাসন)। এরপর দীপু মনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলে ঘনিষ্ঠ বনে যান তারও।
মোস্তফা সারোয়ার মাহমুদের দায়িত্ব পালনকালে দুজন মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন; সচিব পদে দায়িত্ব পালন করে পদ ছেড়েছেন তিনজন। তবে চেয়ার কিংবা প্রভাব বদলায়নি মোস্তফা সারোয়ারের। রাতারাতি ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে লেখালেখি শুরু করেন ফেসবুকে। তবে চরিত্র বদলায়নি। উপপরিচালক (অ্যাডমিন) পদে থেকে বদলি বাণিজ্য করছেন পুরোদমে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মোস্তাফা মাহমুদ সারোয়ার হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গড়ে তোলেন গভীর সখ্য। নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্যসহ নানাভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন বিপুল অর্থ। দীর্ঘদিন চাকরি করেন সদর কার্যালয়ে বয়স্ক ভাতা শাখার উপপরিচালক হিসেবে। এ সময় বয়স্ক ভাতার বরাদ্দ বেশি দেওয়াসহ নানা উপায়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন। এসব টাকায় কুমিল্লায় নির্মাণ করেছেন বিলাশবহুল বাড়ি। ঢাকার মিরপুরে কিনেছেন ফ্ল্যাট। নামে-বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
মোস্তাফা সারোয়ার মাহমুদ সবচেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন যখন নুরুজ্জামান আহমেদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেব দায়িত্ব নেন। এ সময় ডিডি বয়স্কভাতা থেকে মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ ডিডি প্রশাসন হিসেবে প্রাইস পোস্টিং পান। এরপর ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। ২০২৪ সালের নির্বাচনে সরকারি দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও ফেসবুকে আওয়ামী লীগের প্রচারে কাজ করেন। ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হন ডা. দীপু মনি।
নিজের ফেসবুকে সরকারের স্তুতি গেয়ে পূর্বেকার লেখা শেয়ার করেন। সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং প্রভাবশালীদের ছবিও দিতে থাকেন।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পরে ফেসবুকে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে শুরু করেন লেখালেখি। এখন তিনি আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক ও বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী। নিজের পদ ধরে রাখতে শুরু করেন নানামুখী তদবির। যোগাযোগ শুরু করেন বিএনপির সমভাবাপন্ন কর্মকর্তা এবং নেতাদের সঙ্গে। সুবিধা নিতে পরা শুরু করেছেন ধর্মীয় পোশাক।
ইমান-আকিদার পরামর্শও দেন অন্যদের।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফা সারোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘কোনো বদলি বাণিজ্যর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। এখানে যে বদলি বাণিজ্যের সিন্ডিকেট ছিল আমি তা নির্মূল করেছি। তারাই হয়তো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: