জন্মের পর ফুটফুটে নবজাতক শিশুটির মায়ের কোলে থাকার কথা ছিল। স্বজনের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার সেই সময়টাতেই ওর ঠাঁই হয়েছে ব্যাস্ততম শহরের ইট-পাথরে ঘেরা নগরের ফুটপাতে। ওর জন্মদাতা কে? কোন নারী গর্ভে ধারণ করেছিলেন ওকে? জন্মের পরে নিষ্পাপ শিশুটিকে কেনোই বা দেখতে হলো এমন নিষ্ঠুরতা-সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
গভীর রাত ক্ষুধা আর বাচাঁর অকুতিতে ফুটফুটে নবজাতকটি ফুটপাতের আবর্জনায় গড়াগড়ি করে কাঁদছিল অবিরাম। ততক্ষণে নবজাতকের কোমল দেহটি ড্রেনের মশা আর পিপড়ারা দখল করে নিয়েছে। কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসলো না। ৯৯৯ এ কল পেয়ে ছুটে আসলেন নগরীর চকবাজার থানায় সদ্য যোগদান করা ওসি মোঃ আলমগীর মাহমুদ। তিনি পিতার পরম মমতায় বুকে তুলে নেন নাম-পরিচয়হীন নবজাতককে।
হয়তো শিশুটি জন্মের পর কোনো নিষ্ঠুর বাস্তবতায় নাম না জানা বুকের ধনকে ব্যস্ত সড়কের ধারে ফেলে গেছেন তার মা অথবা জন্মদাতা পিতা। নিশ্চয় তারা চেয়েছিলেন তাদের সন্তানও কারো স্নেহ-মমতায় বড় হোক। হয়তোবা হবেই। কারণ শিশুটিকে উদ্ধারের পর থেকে শুরু করে ওসি আলমগীর মাহমুদের তদারকি আর হাসপাতাল কর্মীদের মমতা কম পাচ্ছে না সে।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টার দিকে নগরীর চকবাজার থানার দামপাড়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ফুটপাতের পরিত্যক্ত স্থান থেকে এই নবজাতক মেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আল আমিন নামের এক ব্যক্তি বাসার নিচে শিশুর কান্নার শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে ওই নবজাতকটিকে দেখতে পান। পরে সে জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে একদল পুলিশ নিয়ে চকবাজার থানায় সদ্য যোগদান করা ওসি মোঃ আলমগীর মাহমুদ কন্যা শিশুটিকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়ে যান। বর্তমানে নবজাতকটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর মাহমুদ।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর মাহমুদ বলেন, ‘৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে পরিত্যক্ত স্থান থেকে নবজাতককে উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় প্রায় ১ কেজি ৭'শ গ্রাম ওজনের শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'শিশুটিকে যখন উদ্ধার করা হয়েছে, তখন তার অবস্থা ছিলো আশঙ্কাজন। ভোর ৪টার দিকে তার অবস্থার একটু উন্নতি হয়। আমরা নবজাতকের যত্ন নিচ্ছি। যা প্রয়োজন হচ্ছে, সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের অবজারভেশনে রাখার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যারা নবজাতককে ফুটপাতে রেখে গেছে তাদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।'
উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০ টায় আকবরশাহ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর মাহমুদ নগরের কর্নেলহাট এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে আরো একটি নবজাতক উদ্ধার করেছিলেন। একুশের প্রথম প্রহরের আগে শিশুটিকে উদ্ধার করার কারণে নাম রাখা হয়েছিল 'একুশ'। পরে আদালতের মাধ্যমে একুশকে এক দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: