পায়রা সেতুর উদ্বোধন আগামীকাল

সময় ট্রিবিউন | ২৩ অক্টোবর ২০২১, ২২:৪২

পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার ও প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। ছবি: সংগৃহিত

পটুয়াখালীর পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের পথ খুলে যাবে।

আগামীকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি এই সেতু উদ্বোধন করবেন।

একসময় সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা যেতে ১০টি নদীতে ফেরি পারাপার হতে হতো। তবে এখনও দুটি নদীতে ফেরি পারাপার হতে হয়। একটি পদ্মা, অন্যটি পায়রা। নদী পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। পদ্মা সেতুর কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। পটুয়াখালীর পায়রা সেতুর অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি উন্মুক্ত হলে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে আরেক ধাপ এগুবে দক্ষিণাঞ্চল।

পায়রা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা সেতু।

এ সেতু নির্মাণের নকশা কিছুটা ব্যতিক্রম। ৪ লেনবিশিষ্ট সেতুটি নির্মিত হচ্ছে এক্সট্রাডোজড ক্যাবল স্টেইড প্রযুক্তিতে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুও এই প্রযুক্তিতে নির্মিত। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি ক্যাবল দিয়ে ২ পাশে সংযুক্ত থাকবে। নদীর জলতল থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু হবে। উভয় পাড়ে ৭ কিলোমিটার জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। এই সেতুতে ১৩০ মিটার গভীর পাইল বসানো হয়েছে। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক থাকবে।

দেশে প্রথমবারের মতো এই সেতুতে 'ব্রিজ হেলথ মনিটর' (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ) স্থাপিত হচ্ছে। যার ফলে বজ্রপাত ও ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর ভাইব্রেশন সিস্টেমে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে সেই বিষয়ে সংকেত দেবে। সেতুর পরিবেশগত ক্ষতি এড়াতেই এই প্রযুক্তি থাকছে।

এ ছাড়াও, সেতুর পিলারের পাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এতে কোনো কিছুর ধাক্কায় সেতুর ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে, বাড়বে সেতুর স্থায়িত্ব। আলাদা সাবস্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাতি জ্বলবে। থাকছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থাও।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, সরকার ২০১২ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। বিদেশি অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং সেসময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ দশমিক ২৮ কোটি টাকা।

কিন্তু সেতুর প্রাথমিক নকশায় অনেক পরিবর্তনে এনে পরামর্শদাতারা টেন্ডারের নথি প্রস্তুত করেন এবং দরপত্র প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে দাতা সংস্থার সম্মতি নিতে হয়েছে। ফলে নির্মাণ কাজ শুরু হতে দেরি হয়ে যায়।

এ ছাড়াও, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্প ব্যয় একটি ধারণাগত নকশার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিস্তারিত নকশা অনুসারে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। ফলে সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়। সর্বশেষ এই সেতু নির্মাণে চুক্তি-মূল্য ছিল এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তবে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১১৮ কোটি টাকা। সাশ্রয় হচ্ছে ৫২ কোটি টাকা।

পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, 'মূল সেতু, সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২৪ অক্টোবর এই সেতুর উদ্বোধন করবেন। এখন শেষ মুহূর্তে সেতু এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে যাবে এই সেতু। পায়রা সেতু উন্মুক্ত হলে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন যান চলাচল স্থাপিত হবে। পরবর্তীতে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।'

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন সেতুটি নির্মাণে কাজ করছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: