দেখতে দেখতে চলে গেছে ৮টি বছর। রানা প্লাজা, এখন অনেকের কাছে ধুলো পড়া এক স্মৃতি। কিন্তু যারা সেদিন আহত হয়েছেন তাঁদের কাছে গত তিন বছরের প্রতিটি দিনই যেনো একেকটা দু:স্বপ্ন। অনেকে ক্ষতিপূরন পেয়েছেন আবার অনেকে পাননি। করা হয়নি পুনর্বাসনও। আট বছরেও শুরু হয়নি ট্র্যাজেডির বিচার কাজ। বিচারের অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ায় হতাশ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারগুলো। ভবন মালিক সোহেল রানাকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় নয়, সরাসরি হত্যাকাণ্ডের মামলা আমলে নিয়ে নতুন করে অভিযোগ গঠনের দাবি শ্রমিক নেতাদের।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে রানা প্লাজা নামের ভবনটা ধসে পড়ে। যারা সেদিন সড়কে দাঁড়িয়ে কাজে যোগ না দিতে প্রতিবাদ করছিলেন। তারাই অল্প সময়ের ব্যবধানে ভবনটির নিচে চাপা পড়ে জীবন বাঁচাতে আর্তচিৎকার করেন। দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক ও নিহত পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এটি কোন দুর্ঘটনা নয় হত্যাকাণ্ড।
২০১৩ সালের মে মাসে সাভার মডেল থানায় রানার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদক ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের চারটি দায়ের করা মামলা সিআইডির তদন্তাধীন। তবে ভবন মালিকের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের মামলা আমলে নিয়ে নতুন করে অভিযোগ গঠনের দাবি শ্রমিক নেতাদের।
২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ভবনের নিচে চাপা পড়ে সরকারি হিসেবে প্রাণ হারান ১ হাজার ১১২ জন শ্রমিক। আহত হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। এ ঘটনায় পরদিন সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।
২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় অভিযোগ পত্রে ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। ৪১ আসামির মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৩৯ জন।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলেও এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।
সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আট আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেন। পরে ছয়জন আসামির পক্ষে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে দুজন আসামির পক্ষে স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফায়েত উল্লাহ এবং তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের পক্ষে স্থগিতাদেশ এখনো বহাল আছে। যে কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে মামলাটি যাতে সচল হয়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে মামলাটি করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এই মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই বছরের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অভিযোগ গঠন করেন। তবে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি।
বিচারকাজ এখনো শেষ না হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন শ্রমিকনেত্রী, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘কবে বিচার শেষ হবে? বিচার পাওয়ার জন্য শ্রমিকদের আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে? আমরা বিচারটা দেখতে চাই।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: