রংপুরের পীরগঞ্জের কয়েকটি স্থানে বাড়িঘরে আগুন দেওয়া ও লুটপাটের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
এই কমিটিকে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়টি কমিশনের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী আরফান আশিকের সই করা এক চিঠিতে জানানো হয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, গঠিত এই কমিটি আগামী ২০ অক্টোবর বা কাছাকাছি সময়ে সরেজমিনে ঘটনার প্রকৃত চিত্র উদঘাটন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করবে। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিল কি না, সে বিষয়েও অনুসন্ধান করবে।
মানবাধিকার কমিশন বলছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়াসহ কয়েকটি স্থানে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রোববার রাত ১০টার দিকে এসব এলাকায় বসতভিটায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে। এ ঘটনাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন অভিহিত করে মানবাধিকার কমিশন এর তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা যায়, ফেসবুকে কাবা শরিফ অবমাননার অভিযোগ এনে রোববার রাতে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, বটতলা ও হাতীবান্ধা গ্রামের প্রায় ২০টি বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে যায় গবাদিপশু ও নগদ টাকা। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়।
সোমবার রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ঘটনাটি ধর্মীয় উগ্রবাদী কাজ। এ ধরনের কাজ যারা ঘটিয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।‘ সোমবার বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১২-১৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঘর-বাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে, আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা দুষ্কৃতিকারী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে এবং আরও আটকের চেষ্টা চলছে।
পরে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জয়পুরহাট থেকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়া পীরগঞ্জের সেই কিশোর পরিতোষ সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করে বলে জানান পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার।
এর আগে, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ এনে বেশকিছু মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। ওই ঘটনার জের ধরে নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফেনী, চাঁদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মন্দির ও মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের গুলিতে চাঁদপুরে চার জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এর পরের কয়েকদিনেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চলে। সবশেষ গতকাল রোববার (১৭ অক্টোবর) ফেসবুকে কাবা শরিফ অবমাননার অভিযোগে রংপুরের একটি জেলেপল্লিতে অন্তত ২০টি ঘরে আগুন দেওয়া হয়।
চলমান এসব সহিংসতা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঘর-বাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে, আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে, তারা দুষ্কৃতিকারী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে এবং আরও আটকের চেষ্টা চলছে।’ কুমিল্লা-চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মন্দির-মণ্ডপে হামলার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে ‘একটু সময়’ চেয়েছেন তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: