নিপীড়িত বিশ্ব মানবতার মুক্তিই বঙ্গবন্ধুর দর্শন: রওনক জাহান

সময় ট্রিবিউন | ২৫ মার্চ ২০২১, ০৫:২০

‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’ শীর্ষক স্মারক বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান।

ঢাকা: নিপীড়িত বিশ্ব মানবতার মুক্তিই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির দর্শন বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান।

তিনি বলেছেন, মানুষের জন্য ভালোবাসা ছিল বঙ্গবন্ধুর কর্মকাণ্ডের প্রেরণা এবং মানুষের কল্যাণই তার কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বলতেন, তার সারাজীবনের স্বপ্ন হচ্ছে- দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানো।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার অষ্টম দিন বুধবার ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’ শীর্ষক স্মারক বক্তব্যে তিনি বঙ্গবন্ধুর দর্শনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এসব কথা বলেন।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে রওনক জাহান বলেন, “একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্প্রীতির উৎস ভালোবাসা।”

স্কুলে পড়ার সময়কাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এই রাজনৈতিক চেতনা ছিল মন্তব্য করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, তিনি পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন এই ভেবে যে, এই নতুন রাষ্ট্রের দরিদ্র মুসলমান কৃষকরা জমিদার ও মহাজন শ্রেণির নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবে। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি লঙ্গরখানায় কাজ করেছেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের আক্রান্ত লোকদের উদ্ধার করেছেন।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদী ধ্যান ধারনার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং সুষম সমাজ ব্যবস্থা। নির্যাতিত মানুষের মুক্তি এবং ধনী দরিদ্র্যের বৈষম্য দূরীকরণ করতে চাইতেন তিনি।”

তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু সারাজীবন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন; গোষ্ঠীগত ঘৃণা ও সংঘাতকে কখনও প্রশ্রয় দেননি। তিনি সব গোষ্ঠীর সহাবস্থান এবং সব নাগরিকের সমান অধিকারে বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। তিনি সারাজীবন ধর্মের অপব্যাখ্যা, ধর্মের নামে সহিংসতা এবং ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরোধিতা করেছেন।”

দেশীয় রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের ভাবনায়ও বঙ্গবন্ধু তার অহিংস নীতির প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার দেখা নয়া চীন বাইতে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, রাশিয়া হোক, আমেরিকা হোক, ব্রিটেন হোক কিংবা চীন হোক, যেই শান্তির জন্য সংগ্রাম করবে তাদের সঙ্গে আমরা সহস্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে রাজি আছি যে আমরাও শান্তি চাই।

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আগে সারা বিশ্বে তাকে তুলনা করা হতো মহাত্মা গান্ধী ও মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে যারা অহিংস আন্দোলন করেছিলেন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত হিসাবে বঙ্গবন্ধুর এই ভাবমূর্তি ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়তে অত্যন্ত সহায়ক ছিল।”


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: