গ্রেনেড হামলায় মামলা: পলাতক ১৬ আসামি কোথায়

সময় ট্রিবিউন | ২১ আগষ্ট ২০২১, ০৬:২১

গ্রেনেড হামলায় ঘটনায় করা মামলার পলাতক আসামি-ছবি: সংগৃহীত সংগৃহীত

২০০৪ সালের বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন। আহত কয়েকশ’। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় দেড় যুগ আগের সেই মর্মান্তিক ঘটনার বিচার নিম্ন আদালতে শেষ হলেও উচ্চ আদালতে এখনও বিচারাধীন। এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫২ আসামির মধ্যে কারাগারে আটক আছে ৩২ জন। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তিন আসামির। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ আগস্ট মারা গেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম।

আর বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত ১৬ আসামি এখনও পলাতক। এদের একজন ছাড়া বাকিরা কে কোথায় আছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

শুরুতে ১৮ জন আসামি পলাতক থাকলেও পরে দু’জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। অন্য ১৬ জন আসামি এখনও পলাতক। এরমধ্যে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছে।

পলাতক আসামিদের মধ্যে প্রথমেই আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নাম। পুলিশের খাতায় সবাইকে পলাতক দেখানো হলেও তারেক রহমান যে লন্ডনে রয়েছেন সেটা সবার জানা। তবে অন্য পলাতক আসামিদের খুঁজে বের করতে পুলিশ গত ১৭ বছর ধরে তৎপরতা চালালেও তাদের অবস্থানের সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি।

অন্য পলাতক আসামিরা হচ্ছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব চৌধুরী আবদুল হারিছ ওরফে হারিছ চৌধুরী, কুমিল্লার মুরাদনগরের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন মিয়া, বাবু রাতুল আহমেদ, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের ও মুফতি শফিকুর রহমান।

পলাতক আসামিদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে। তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা তাজউদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরপরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভুয়া পাসপোর্টে তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার অবস্থান শনাক্তের জন্য ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। তার সম্ভাব্য অবস্থান পাকিস্তান বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে কেউ কেউ বলছেন সে বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছে।

হানিফ পরিবহনের মো. হানিফ এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাকে খুঁজে বের করতেও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। তার সম্ভাব্য অবস্থান থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়া বলে জানায় পুলিশ।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হারিছ চৌধুরী ভারত অথবা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে বলে পুলিশের ধারণা। তার সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানার জন্য ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা আছে।

 যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলরা। তাকে ফেরাতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু তাকেও ফেরানো যাচ্ছে না। তার নামও ইন্টারপোলের তালিকায় ছিল। কিন্তু বিষয়টি রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে নিশ্চিত করে তার নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকা থেকে বাদ দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। 

 ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাতুল আহমেদ বাবুর নামও রয়েছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায়। তার সম্ভাব্য অবস্থান ইতালি বা দক্ষিণ আফ্রিকায় বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

হরকাতুল জিহাদের অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন সহোদর ভাই। মামলায় তাদের যাবজ্জীবন দণ্ড হয়েছে। তারা বর্তমানে ভারতের তিহার কারাগারে সেখানকার জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আটক রয়েছে।

 অন্য পলাতক আসামিদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, মো. ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার পাকিস্তানে অবস্থান করছে বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্মকর্তাদের। তবে কারোরই অবস্থান বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই পুলিশের কাছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: