রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুন; নিহত ৭

মাহিয়া লোবা | ২৩ মার্চ ২০২১, ২০:১৪

প্রতীকী ছবি।

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে মিয়ানমারের ৭ রোহিঙ্গা নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক। নিখোঁজ রয়েছে অনেকে।

গতকাল সোমবার বালুখালীতে পাশাপাশি ৮,৯,১০ নম্বর ক্যাম্পে আগুন লাগে। কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা ছাত্তার ইসলাম জানান, বেলা ৪ টার দিকে সেখানে প্রথম আগুন দেখা যায়। মি. ইসলাম বলেন, এই ক্যাম্পগুলোতে দুইশোর মতো ঘর রয়েছে। বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে আছে।

গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলা হলেও ভয়াল এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে রোহিঙ্গা উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
পেট্রোল ও কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার সময় ৮ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে বলে বলেন ক্যাম্পবাসী। বিকেল ৪টায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলেও রাত পৌনে ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

কক্সবাজারে অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন জানান, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগে। পরে আগুন ওই ক্যাম্প সংলগ্ন ৮-এইচ, ৯ ও ১০ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। সামছু-দৌজা বলেন, বাতাসের গতিবেগ বেশি হওয়ায় আগুন দ্রুত পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয়রা মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজে যোগ দেন। তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের ৪টি, কক্সবাজারের ২টি, রামুর ১টি ও টেকনাফের ১টিসহ মোট ৮টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও অন্যান্য সংস্থার লোকজন কাজ করেছেন।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর চৌধুরী জানান, আগুনে ৯ হাজার ৬শ’ বসতঘর, ১২শ’ দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং অন্যান্য স্থাপনা পুড়ে গেছে। এসময় মারা গেছেন ৫ রোহিঙ্গা নাগরিক। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ মো. এমদাদ জানান, ক্যাম্পে আগুন নিয়ন্ত্রণে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে পানির সংকট। অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। পানি শেষ হয়ে গেলে আবার পানি নিয়ে আসতে আসতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ক্যাম্পের ব্লকগুলোর গলি সরু হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকছে না। তাছাড়া প্রতিটি ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বালুখালী ৮/ডব্লিউ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাস্টার জকির আলম বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তা আবারো মনে করিয়ে দিয়েছে। রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দেয়া আগুন থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা যেভাবে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করেছিল, এবারও আগুন থেকে বাঁচতে ঘর বাড়ি, সহায় সম্পদ ফেলে সরে যেতে হয়েছে।

বালুখালী ১১নং ক্যাম্পের ইউএনএইচসিআর এর স্বেচ্ছাসেবক রোহিঙ্গা নাগরিক আবদুস সালাম জানান, গৃহহীন রোহিঙ্গাদের আত্মচিৎকারে আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারা নিজেদের ক্যাম্প ছেড়ে পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে আত্মীয় স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক রোহিঙ্গাকে উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন নবনির্মিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক ও বালুখালীর কঙবাজার-টেকনাফ সড়কের উভয় পাশে সাময়িক আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। কাল (আজ মঙ্গলবার) সকাল থেকে তাদের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: