পরিস্থিতির কারণে জনৈক জাফর শহিদুল ইসলামের স্ত্রীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। স্থানীয় জনগনের হাত থেকে মুক্ত হয়ে নিজের স্ত্রীকে এমনটাই বলেছেন তিনি। শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের একটি বিলাশবহুল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে থাকা অবস্থায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে আটক করে স্থানীয় লোকজন। সেখানে আটক নারীর নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা সম্পর্কে মামুনুল হক এবং ওই নারী ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের একটি বিলাশবহুল রিসোর্টে আসেন এক নারীকে নিয়ে। স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষটি তারা ঘিরে ফেলে। এসময় মামুনুল আল্লাহর কসম খেয়ে বলেন সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। যাকে তিনি শরীয়ত মেনে দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন। এসিল্যান্ড ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক জানান ওই নারীর নাম আমিনা তৈয়বা। শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম এবং শ্বশুর বাড়ি খুলনা। পুলিশের দেয়া জবানবন্দিতে ওই নারী জানান তার নাম জান্নাত আরা ঝরনা। বাবার নাম অলিয়ার রহমান। তার বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানা। তবে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে।
তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানতে পেরে নারায়ণগঞ্জ এবং সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে শত শত মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ওই রিসোর্টে এসে জড়ো হয়ে রিসোর্টে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয়দের ওপর ব্যাপক হামলা এবং রিসোর্টে ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে নিয়ে যায় তারা।
সেখান থেকে মুক্ত হয়ে মামুনুল হক ফোন করেন তার স্ত্রীকে। এসময় তিনি তার স্ত্রীকে বলেন, ওই নারী জনৈক জাফর শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনি একথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। এ সময় তিনি তার স্ত্রীর কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।
খবর পাওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ হেফাজত কর্মীরা বিভিন্ন নাশকতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়া ওই নারীকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সময় ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। এছাড়াও মামুনুলের স্ত্রীকে ফোন দিয়ে অবগত করার বিষয় নিয়ে একটি অডিও রেকর্ড সময় ট্রিবিউনের হাতে এসেছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও’র চুম্বক অংশটুকু নিচে তুলে ধরা হলো-
পুলিশ: আপনার নাম যেন কী বললেন?
নারী: জান্নাত আরা (অস্পষ্ট)।
পুলিশ: আপনার বাবার নাম?
নারী: অলিয়র রহমান।
পুলিশ: বাড়ি কোথায়?
নারী: ফরিদপুর।
পুলিশ: ভাঙা থানায়?
নারী: জ্বি।
পুলিশ: না, আলফাডাঙ্গা থানায়। তখন যে বললেন ভাঙা থানায়?
নারী: ভুল বলেছিলাম।
পুলিশ: আপনি মামুনুল হক সাহেবের সেকেন্ড ওয়াইফ, না?
নারী: জ্বি।
পুলিশ: আপনাদের কোনো বেবি নেই?
নারী: না।
পুলিশ: ওনার প্রথম ঘরের স্ত্রীর কয় সন্তান?
নারী: চার ছেলে।
পুলিশ: মেয়ে নেই?
নারী: না।
পুলিশ: এখানে কখন আসছেন?
নারী: লাঞ্চ আওয়ারের পরে।
পুলিশ: এর আগে কোথায় ছিলেন?
নারী: বাসায়।
পুলিশ: বাসা কোথায়? কোন বাসায়? ঢাকায়?
নারী: জ্বি।
পুলিশ: ঢাকা বাসা কোথায়?
নারী: মোহাম্মদপুর।
পুলিশ: মোহাম্মদপুর কোথায়?
নারী: মোহাম্মদপুরের এখানেই বাসা।
পুলিশ: এখানে কি বেড়াতে আসছিলেন নাকি থাকতে আসছিলেন?
নারী: বেড়াতে আসছিলাম।
পুলিশ: কোথায়, মিউজিয়ামে?
নারী: এখানেই আসছিলাম। রেস্ট করতে।
পুলিশ: বাসায় রেস্ট করার জায়গা নেই?
নারী: অবশ্যই আছে। হ্যাঁ, যায়, সেটা তো প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার জন্য, ঘোরার জন্য। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ আমরা দেখতে দেখতে একটু লাঞ্চ করে একটু রেস্ট করে চলে যাব।
পুলিশ: হঠাৎ করে এখানে শোরগোল কেন হলো, সবাই কী করে জানতে পারল বা জানল?
নারী: আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
পুলিশ: আপনি বাথরুমেই কী কারণে এলেন? আপনার তো হাসব্যান্ড।
নারী: অ্যাকচুয়ালি আমার হাসব্যান্ড ঠিক আছে। কিন্তু আমার হাসব্যান্ড তো আর দশটা হাসব্যান্ডের মতো না। আমি সবার সামনে যেতে পারি না তাই।
মামুনুল হক ওই নারী সম্পর্কে যা বললেন...
প্রশ্ন: আপনার কী হয়?
মামুনুল: আমার ওয়াইফ। আমি তাকে বিয়ে করেছি। শরিয়তসম্মতভাবে বিয়ে করেছি।
প্রশ্ন: কবে বিয়ে করছেন? বিয়ে করলে রয়াল রিসোর্টে কেন আসবেন সময় কাটাতে?
মামুনুল: বিয়ে করেছি, প্রমাণ আছে, সাক্ষী আছে।
প্রশ্ন: কয় বছর আগে বিয়ে করেছেন?
মামুনুল: দুই বছর আগে।
প্রশ্ন: দুই বছর আগে বিয়ে করলে সময় কাটাতে রিসোর্টে কেন আসছেন?
মামুনুল: আমি বেড়াইতে আসছি।
প্রশ্ন: আপনার ওয়াইফের নাম কী?
মামুনুল: আমিনা তৈয়বা।
প্রশ্ন: তার বাড়ি কই?
মামুনুল: কিছুই বলব না।
এদিকে স্ত্রীর সঙ্গে মামুনুল হকের সেই ফোনালাপের অডিও ক্লিপটি চুম্বক পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল-
মামুনুল: আসসালামু-আলাইকুম
মামুনুলের স্ত্রী: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ
মামুনুল: পুরো বিষয়টা আমি তোমাকে সামনে এসে বলব। ওই মহিলা যে ছিল সে হলো আমাদের শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ। ওটা নিয়ে সেখানে পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিল যে, এটা বলা ছাড়া.... আমাকে ইয়ে করে ফেলছে-বুঝছো?
মামুনুলের স্ত্রী: আচ্ছা, বাসায় আসেন, তারপর যা বলার বইলেন
মামুনুল:তুমি বিষয়টা.. অন্যান্য কথা অন্যদের বলতে হবে। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে। তুমি আবার মাঝে অন্যকিছু মনে কইরো না। তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবা, হ্যাঁ, আমি বিষয়টা জানি।
মামুনুলের স্ত্রী: ঠিক আছে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: