এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন অমায়িক ভাষায়। তা শুনে অনেকের মনে হবে, নীরিহ একজন ভাল মানুষ। কিন্তু গভীর রাতে সেই মানুষটিই হয়ে ওঠেন অন্ধকারের মুর্তিমান আতংক।
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানার বাইশারী, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের কালাপাড়া, রামু উপজেলার ঈদগড় ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ভোমরিয়াঘোনা পূর্ণ গ্রামসহ পাঁচটি গ্রামে চলে তাঁর অপরাধের বাদশাহি।
তাঁর নাম আরফাতুর রহমান প্রকাশ সোনা মিয়া। চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের কালাপাড়ার বাসিন্দা হলেও ভোটার হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নে। তার পিতা সিরাজুল ইসলাম আগের কার রোহিঙ্গা ও পূর্ণ গ্রাম বনবিটের কথিত ভিলেজার।
অথচ অভিযোগ রয়েছে, ৫ গ্রামের মানুষ তাঁর নাম শুনলে ভয় পায়। কারণ তাঁর নেতৃত্বে রয়েছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। নাইক্ষ্যংছড়ি ও চকরিয়া থানায় সন্ত্রাসীর তালিকায় রয়েছে তাঁর নামও।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাঁর বিরুদ্ধে ডজনের বেশি মামলার রেকর্ড পুলিশের কাছে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, সোনামিয়াকে অনেকে চেনে বনদস্যু হিসেবে। তাঁর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে খুটাখালী ইউনিয়নের কালাপাড়া, বাইশারির কেইঙ্গাবিল, রামুর ঈদগড়, ঈদগাঁয়ের ভোমরিয়াঘোনার পাহাড় বেষ্টিত অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। তাঁর বাহিনীতে রয়েছে অস্ত্রধারী ও ডাকাত প্রকৃতির অন্তত ১২ জন সক্রিয় সদস্য।
উল্লেখিত এলাকায় অপহরন, খুন, ডাকাতি, বনের জায়গা দখল-বেদখল, বনের গাছ পাচার, চাঁদাবাজি, বালু পাচার, নারীদের হয়রানিসহ নানা অপরাধে জড়িত সোনা বাহিনী।
বাহিনীতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইব্রাহিম, ফরিদুল আলম, আনু মিয়াসহ কালিরছড়া, ঈদগাঁও, ভোমরিয়াঘোনার একাধিক ব্যক্তি।
সোনা মিয়ার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা নং জিআর ৭২৩/১৮ইং, জিআর ২৩৭/১৫ইং, বন মামলা নং ৫৯/১১ইং,২৪/১২ইং,২১৭/১৭ ইং,৩০/১১ইং এবং আদালতে খুন, ডাকাতি, অস্ত্র কারবারি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, বনদস্যুতা, গাছ কাটা, বনের জায়গা দখল-বেদখলসহ নানা অপরাধের দায়ে মামলা রয়েছে। এর আগে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে বেশ কয়েক বছর জেল খেটেছেন।
খুটাখালী কালাপাড়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সোনামিয়া একসময় ডাকাত ছিলেন।
এলাকার ভয়ংকর সন্ত্রাসী সোনামিয়া বারবার অধরা! যার শরীরে এখনও লেগে আছে খুনের রক্তের দাগ।
তার বিরুদ্ধে রয়েছে তরুণ শিল্পি জনি হত্যা এবং নির্বিচারে গুলি, বসতবাড়ীতে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও দখলবাজীসহ বহু মামলা। খুটাখালীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছারকে অপহরন করা হয়। এরপর তিনি জীবন বাচাতে তাদের ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বিগত সরকারগুলোর আমল থেকে আজ অব্দি নির্ভয়ে আইনকে তোয়াক্কা না করেই হত্যা, ডাকাতি, দখল বেদখল ছাড়াও সশস্ত্র ক্যাডার হিসেবে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে অন্যের সম্পত্তি কেড়ে নেয়া ছাড়াও প্রতিনিয়ত নানা অপরাধের জন্ম দিচ্ছে ভয়ংকর সোনামিয়া।
তাছাড়াও কোটি কোটি টাকার গাছ ডাকাতির ঘটনা ঘটায় সে। নিরীহ মানুষের জমি দখল করে সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী, ডাকাতসহ পলাতক দাগী আসামীদের সমন্বয়ে বিশাল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরী করেন। সেখান থেকেই পুরো পাহাড়ি জনপদে ডাকাতিসহ ভয়াবহ অপরাধের জন্ম দিয়েছে।
এছাড়াও অবৈধ অস্ত্রসহ একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয় সোনামিয়া।
শুধু তাই নয়, ভয়ংকর এই খুনি এলাকায় অনেককে অপহরণ করে এবং তার সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা মিলে মুক্তিপন আদায় করে।
কিন্তু বার বার ক্ষমতার পালাবদল হলেও বহাল তবিয়তে সোনামিয়া। কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে নিজের অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে আসছে তার বাহিনী।
এতে এলাকার মানুষের জান মাল নিয়ে শঙ্কায় আছেন বহু সাধারণ মানুষ। তাই অবিলম্বে ভয়ংকর এই সন্ত্রাসীর গ্রেফতার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: