করোনার কারণে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বরে মণ প্রতি ৪০ কেজির বদলে ৪৮ কেজি আম দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বাইরের ক্রেতা না আসায় আমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। একে তো আমের দাম নেই, তার ওপর ওজনে বেশি দিতে দিতে দিশেহারা আমচাষি ও বাগান মালিকরা।
বাজারে বাড়তি আম নেওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়ে বানেশ্বরের আমচাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, আড়তদাররা এক মণের দাম দিলেও ওজনে নিচ্ছেন ৪৮ কেজি। বাড়তি এই আট কেজির দাম দিচ্ছেন না। ক্যারেটের ওজন ধরছেন আরও তিন কেজি। সব মিলিয়ে ৫০ কেজি দিতে হচ্ছে। গত বছর আড়তদাররা ৪৬ কেজিতে মণ ধরেছিলেন। এবার বাড়িয়েছেন।
পুঠিয়ার জামিরা এলাকা থেকে বানেশ্বর হাটে আম বিক্রি করতে এসেছিলেন বাগান মালিক শাহ মোহাম্মদ। বাজারে আমের দাম না পেয়ে হতাশ তিনি।
এই আম চাষি জানিয়েছেন, বাজারে গত বছরের চেয়ে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা কমে রকম ভেদে প্রতি মণ আম বিক্রি হচ্ছে। এতে চাষি ও বাগান মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। করোনার কারণে ক্রেতা না থাকায় এই সংকট। এই পরিস্থিতিতে আম সংরক্ষণ ও বিদেশে রফতানি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এই আম চাষি।
একই ভাষ্য বানেশ্বরের কাপাশিয়া এলাকার আম চাষি আবুল কাশেমের। আমহাটের প্রবেশ মুখে ভ্যান ভর্তি ৫০ ক্যারেট খিরসাপাত আম রেখে পাশের গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। চোখে মুখে তার হতাশার ছাপ।
এই আম চাষি জানান, তার প্রায় ১০ বিঘা আমের বাগান রয়েছে। গোপালভোগ শেষ। এখন নামছে খিরসাপাত। গাছেই পাকছে আম, কিন্তু বাজারে দাম নেই। গাছে আম রাখার উপায়ও নেই। বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) দুপুর ১২টার দিকে তিনি আমের হাটে এসেছেন। কিন্তু ৪টা পর্যন্ত একজন ক্রেতাও আমের দাম বলেননি। শেষের দিকে হয়তো গড়পড়তা দামে আম বিক্রি হবে। তাতে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার শঙ্কা আবুল কাশেমের।
তবে এই পরিস্থিতিতে আসলে তাদের কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কে জে এম আবদুল আওয়াল।
তিনি বলেন, রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়ে খারাপ। কিন্তু আম বাণিজ্যের কথা ভেবে কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে না প্রশাসন। ভোক্তারা একান্ত প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে খোলা বাজারে আমের ক্রেতা কমে গেছে। একই কারণে বাজারে আমের চাহিদাও কম। এ জন্যই পাইকারি ক্রেতারাও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাছাড়া আম কিনতে যারা রাজশাহীতে আসতেন করোনার কারণে তারাও এখন আর সেইভাবে আসছেন না। এর প্রভাব পড়ছে পুরো অঞ্চলের আম কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে।
এদিকে আমের হাটে ঢলনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বানেশ্বর হাটের ইজারাদার উসমান আলী। তিনি জানান, বাড়তি ওজন যেন কেউ না নেন বা দেন সেজন্য মৌসুমের শুরুতে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত পরে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ওজনের অতিরিক্ত আম দিয়েছেন এমন কেউ অভিযোগও দেননি। ফলে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
তবে জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত কেন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক।
তিনি বলেন, আসলে এটি স্থানীয় প্রথায় পরিণত হয়েছে। কৃষকদের স্বার্থে এই প্রথা বাতিল করা হয়। কিন্তু তারপও এই প্রথা কেন ফিরলো তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: